Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মালদ্বীপকে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সারাবাংলা ডেস্ক
২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৪১

মালদ্বীপের সংসদ পিপলস মজলিশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মালদ্বীপের জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে দেশটির সরকারি ও বেসরকারি খাতকে পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, কোনো দেশ একা উন্নতি করতে পারে না। আমি আশা করি আমাদের উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে। বাংলাদেশ সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমি মালদ্বীপের সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে পারস্পরিক সুবিধার জন্য আগামী ৫০ বছরে উন্নয়ন যাত্রায় আমাদের অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানাই।

বিজ্ঞাপন

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহ’র আমন্ত্রণে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী দেশটির সংসদে ভাষণ দেন।

কোনো দেশ বিচ্ছিন্নভাবে উন্নতি করতে পারে না উল্লেখ করে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সবাইকে শিখিয়েছে— পরস্পর নির্ভরশীল এবং একটি উন্নত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের স্বার্থে সবাইকে অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে হবে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতিগত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি, যেমনটি আমাদের জাতির পিতা বলে গেছেন।

আরও পড়ুন- ‘মালদ্বীপের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা ফলপ্রসূ’

মালদ্বীপের জাতীয় সংসদ ‘পিপলস মজলিস’-এ স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ ও ডেপুটি স্পিকার স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রী পরে দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন এবং মালদ্বীপের সংসদের স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করেন।

মালদ্বীপের পার্লামেন্টের স্পিকার তার বক্তৃতায় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশের নেতৃত্বদানে শেখ হাসিনার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ইস্যুগুলোতে সম্মত করাতে শেখ হাসিনাকে পাঁচ চুক্তি প্রণেতার অন্যতম হিসেবে বিবিসি রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করেন। স্পিকার প্রধানমন্ত্রীকে একটি নৌকার চিত্র শিল্পকর্ম উপহার দেন।

বিজ্ঞাপন

‘পিপলস মজলিস’-এ দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের উন্নয়নের যাত্রা, এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে সফল উত্তরণ প্রত্যক্ষ করে আমরা বিশেষভাবে উৎসাহিত হয়েছি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ পরিপূরকতাগুলোকে কাজে লাগাবে। এই সুন্দর দেশের গণতন্ত্রের প্রাণকেন্দ্র, রাজনীতি ও নীতির এই আবাসস্থলে মজলিসের বিশিষ্ট সদস্যদের মাঝে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি গভীরভাবে সম্মানিত।

পিপলস মজলিশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সারাজীবন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত— এমন এক জন ব্যক্তি হিসেবে মালদ্বীপের মজলিসে উপস্থিতি হতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, আমি এখানে একটি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সংসদে উপস্থিত হতে পেরে আনন্দিত, যার সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক যোগসূত্র, বহুবিধ মিল, একই ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং সমৃদ্ধির একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করে থাকি।

২০২১ সালকে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি যুগান্তকারী বছর উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে ফলপ্রসূ দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে এ বছর। আশা করি, দুই দেশের আগামী ৫০ বছরের যাত্রা আরও ফলপ্রসূ হবে এবং জনগণের জীবনে অর্থবহ পরিবর্তন আনবে। আমি মালদ্বীপের জনগণ ও এর অগ্রগামী নেতাদের জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।

ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, জাতির পিতা আজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত শোষণ, বঞ্চনাহীন সমাজ বিনির্মাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন। গত মার্চে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতির পিতার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের উদ্যোগ এবং পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থমকে দেওয়ার অপচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি ও আমার ছোট বোন (শেখ রেহানা) সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। ছয় বছর আমাদের প্রবাস জীবন কাটাতে হয়। বাংলাদেশে ফিরে এসেও কারাবাস, একাধিক গুপ্তহত্যার চেষ্টা এবং অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি যে আজ বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশংসা অর্জন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশের আর্থসামাজিক মুক্তির পথের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দর্শন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আজ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশ গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আগের কয়েক বছরে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি ছিল। মহামারির ঠিক আগে আমাদের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের এবং বিশ্বের ৩৪টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। এছাড়া গত এক দশকে আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচক, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, গড় আয়ু, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি, প্রাথমিক শিক্ষা ও সাক্ষরতার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা হয়তো অবগত আছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে গত ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশের এলডিসি বিভাগ থেকে উন্নয়মশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। আমাদের উন্নয়ন যাত্রার ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করার লক্ষ্য বাস্তবায়নের পর এখন লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে এসডিজির সব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে পরিণত করা। পর্যায়ক্রমে ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ এবং স্থিতিস্থাপক ডেল্টায় পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।

উন্নয়নেরও চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) হিসেবে আমরা যে সুবিধাগুলো উপভোগ করতাম, তা প্রত্যাহারের পরে আমরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হব তা মোকাবিলার জন্য আমাদের দৃষ্টি থাকবে অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণ এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের দিকে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে একটি প্রযুক্তি-চালিত সমাজ এবং উদ্ভাবন-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাসস।

সারাবাংলা/টিআর

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পিপলস মজলিশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ সফর বাংলাদেশ-মালদ্বীপ মালদ্বীপের সংসদ মালদ্বীপের সংসদে ভাষণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর