বাঘাইছড়িতে তামাক ছেড়ে সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষক
২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৩৫
রাঙ্গামাটি: আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির দুর্গম গ্রামগুলোর বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন হলুদের সমারোহ। চারদিকে সরিষাফুলের হলুদ আবহে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছির পাল। চিরসবুজের বুকে এ যেন কাঁচা হলুদের আলপনা। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই ফুলের মেলা। প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিক রূপে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্র জানায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে সরিষা ক্ষেতগুলোর পাশে বসানো হয়েছে সারি সারি মৌ-চাষের বক্স। সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ করে এসব বাক্সে মৌমাছি বাসা বানাচ্ছে। মাসখানেক পরেই পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত মধু। পুরো উপজেলায় এবারই প্রথম ধাপে পরীক্ষামূলকভাবে ১৫৫ একর জমিতে প্রায় দুইশ কৃষক সরিষার আবাদ করছেন। তন্মধ্যে কিছু সংখ্যক জমিতে মধু আহরণের জন্য চাষিরা মধু সংগ্রহ বাক্স বসিয়েছেন। এছাড়া তেল বীজ, মধুর পাশাপাশি কৃষকরা সরিষা থেকে উন্নত গো-খাদ্যও তৈরি করতে পারবেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিজ উদ্যোগে অনেক কৃষক সরিষা চাষ করেছেন। তবে উল্লেখযোগ্য ভাবে চাষাবাদ এবারই হয়েছে।
আবাদকৃত জমিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের সিজুক বটতলা ও দূরছড়ি, রূপকারী, মুসলিম ব্লক এলাকায় বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে হলুদক্ষেত গড়ে তোলা হয়েছে। সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্থানীয়রা সরিষাক্ষেতের আশপাশে ভিড় জমাচ্ছেন।
সারোয়াতলী ইউনিয়নের চাষী বরুণ বিকাশ চাকমা বলেন, আগে এই জমিতে তামাক চাষ করতাম। পরে জানতে পারলাম তামাক থেকে সরিষা চাষে বেশি লাভ। তাছাড়া তামাক খুবই ক্ষতিকর। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি ৫ একর জমিতে সরিষা চাষ করেছি। পাশাপাশি কিছু ভুট্টা ও মৌসুমি ফসল চাষাবাদ করেছি। ফলন খুবই চমৎকার হয়েছে। আশা করছি, সরিষা চাষে লাভবান হতে পারব।
পৌরসভার মুসলিম ব্লক এলাকার চাষি নাছের উদ্দিন বলেন, ১০ একর জমিতে সরিষা চাষ করেছি। মধুবাক্স বসানো হয়েছে। কৃষি বিভাগ যদি কৃষকের পাশে থাকে, তাহলে অন্যান্য কৃষকরাও সরিষা ও মধু; যৌথ-চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ অলি হালদার বলেন, তামাক চাষ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য কৃষি অফিস কৃষকদের সরিষার বীজ, সার, মধু সংগ্রহ করার বাক্সসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহায়তা দিয়েছে। সরিষা চাষ করে খুবই লাভবান হওয়া যায়। ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা, সরিষার শাক, সরিষা থেকে ভালো মানের তেল উৎপাদন এবং তেল আহরণের পর অবশিষ্ট অংশ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষামূলক ফলন ভালো হলে আগামীতে আরও বৃহৎ পরিসরে উদ্যোগ গ্রহণ করা যাবে।
সারাবাংলা/এএম