‘বউ আর ৩টা বাচ্চা বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও বলতে পারছি না’
২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:১৯
বরিশাল: এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তার সঠিক হিসাব এখনও কেউ দিতে পারছেন না। লঞ্চে আগুন লাগার পর এখনও তিন সন্তান ও স্ত্রীকে খুঁজে পাননি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের মোল্লার হোড়া গ্রামের বাসিন্দা শিমুল সরদার। দিন-রাত নদীর তীর আর হাসপাতালে স্বজনদের খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা তিনি।
শিমুল সরদার জানান, তার স্ত্রী তাছলিমা বেগম (৩৫), মেয়ে সুমাইয়া আক্তার মীম (১৫), সুমনা আক্তার তানিসা (১২) ও ছেলে জুনায়েদ (৭) ঢাকায় থাকত। তারা বেড়াতে বরগুনা আসছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সন্তানদের নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ওঠেন তার স্ত্রী। একই লঞ্চে তার দুই চাচাতো ভাই বরগুনা ফিরছিলেন। রাত ৩টা ১০ মিনিটে চাচাত ভাই রাশেদ সরদার তাদের লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনাটি মোবাইলে জানায়। ওই সময় তারা সবাই বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করছিলেন। কথা বলতে বলতেই মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এরপর একাধিকবার ফোন দিয়েও আর তাদের পাওয়া যায়নি। লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের খবর জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তিনি।
ঘটনাস্থলে এসে তিনি জানতে পারেন, জ্বলন্ত লঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে নদীতে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন তার দুই চাচাতো ভাই। পরে স্থানীয় আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু তার স্ত্রী ও তিন সন্তানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সুগন্ধা নদীর তীরের দিয়াকুল গ্রামে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে অনেক খোঁজখুঁজি করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। তারা আদৌ বেঁচে আছে না মরে গেছে তাও বলতে পারছি না।
এদিকে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। বাকি ৩৬ জনের পরিচয় এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। অগ্নিদগ্ধে অনেকেরই চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। মৃতদেহ দেখে কাউকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অগ্নিদগ্ধদের পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএ টেস্ট লাগতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল বলেন, নিখোঁজ যাত্রীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা এখনও বলতে পারছি না। ফায়ার সার্ভিস এবং কোস্টগার্ডের একাধিক টিম সুগন্ধা নদীতে নিখোঁজদের সন্ধানে রয়েছে। এছাড়া বরগুনায় কন্ট্রোল রুম খুলে শহরে মাইকিং করা হয়েছে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহের জন্য। নিখোঁজদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে। পরে ঝালকাঠীর পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। আগুন লাগার পর যাত্রীরা নেভানোর চেষ্টা করেন। অনেকে ছাদে চলে যান। কেউ কেউ নদীতে লাফ দেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দগ্ধ হয়েছেন দেড় শতাধিক।
সারাবাংলা/এসএসএ