Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৪টি গবেষণা অসমাপ্ত রেখেই অবসরে হাইব্রিড আমের জনক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৩২

‘বারি আম ১৮’ জাতের একটি গাছ, ইনসেটে ড. জমির উদ্দিন ও এই জাতের একটি আম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: হাইব্রিড আমের ১৪টি গবেষণা অসমাপ্ত রেখেই অবসরে গেলেন বাংলাদেশে হাইব্রিড আমের জনকখ্যাত বিজ্ঞানী ড. জমির উদ্দিন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে ড. জমির উদ্দীন ছয়টি আমের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে চারটি হাইব্রিড জাতের, যার একটি রঙিন হাইব্রিড। এ মাসেই ‘বারি আম ১৮’ নামে তার উদ্ভাবিত নতুন হাইব্রিড আমের জাত উন্মুক্ত হয়।

শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) ছিল ড. জমিরের শেষ কর্মদিবস। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন আম গবেষণা কেন্দ্রে উদ্যানতত্ত্ববিদ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। অবসর নিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

ছয়টি আমের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি বেশকিছু টেকসই প্রযুক্তি আম চাষিদের মাঝে সম্প্রসারণ করেছেন ড. জমির উদ্দীন। এর মধ্যে বেসিন পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় সেঁচ দেওয়ার পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে কৃষক পর্যায়ে। হাইব্রিড আম নিয়ে আরও ১৪টি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি, যা অসমাপ্ত রেখেই শেষ হলো তার কর্মজীবন।

ড. জমির উদ্দিন বলেন, তিনি অনেক খুশি যে তিনি দেশকে ছয়টি আমের জাত উপহার দিতে পেরেছেন। আমার উদ্ভাবিত চারটি হাইব্রিড জাতের মধ্যে একটি রঙিন, যা দেশের একমাত্র রঙিন আম।

অসমাপ্ত গবেষণা বিষয়ে জানতে চাইলে ড. জমির বলেন, বর্তমানে চলমান গবেষণার মধ্যে পাঁচটি জাত খুব প্রতিশ্রুতিশীল মনে হয়েছে। বিভিন্ন জাতের সঙ্গে ক্রস করে হাইব্রিড আমের এ জাতগুলো পাওয়া গেছে। এগুলো নিয়ে হয়তো আগামীতে মুক্তায়নের সিদ্ধান্ত আসবে।

নিরাপদ আমের উৎপাদন বাড়াতে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন ড. জমির। অবসরে গেলেও আগামীতে এ বিষয়ে কাজ করতে চান বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

ড. জমিরের জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার আলীনগর গ্রামে। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি। আলিনগর গ্রামে আলিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু। আলীনগর বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মধ্যে তৎকালীন মহাকুমায় বৃত্তি পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছিলেন।

১৯৭৮ সালে ড. জমির প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। এরপর নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ে। ১৯৮৫ সালে বিএসসি (কৃষি) স্নাতক পাসের পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যানতত্ত্ব বিষয়ে প্রথম বিভাগে এমএস ডিগ্রি ও হাইব্রিড আমের ক্রস বা সংক্ররায়ন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

এর মধ্যেই ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের ফার্মিং সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ড. জমির। একই প্রতিষ্ঠানে উদ্যানতত্ত্ববিদ হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ পেয়ে ১৯৯৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন আম গবেষণা কেন্দ্রে উদ্যানতত্ত্ববিদ হিসেবে যোগ দেন।

এখন পর্যন্ত ড. জমির উদ্দিনের ৬০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি কৃষি, বিশেষ করে আমের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন, যা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

চাঁপাইনবাবগঞ্জ উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র ড. জমির উদ্দীন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাইব্রিড আম