লঞ্চে আগুন: বার্নে ভর্তি ১৫ জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক
২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৩১
ঢাকা: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে ১৫ জন এখন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি। এর মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন তিন জন, এইচডিইউতে রয়েছেন দুই জন। বাকি ১০ জনকে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের কেউই আশঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডা. আইউব বলেন, ইনস্টিটিউটে ভর্তি ১৫ জনকে আশঙ্কামুক্ত বলার সুযোগ নেই। অনেকের শরীর দগ্ধের পরিমাণ কম। কিন্তু তাদের শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ (রোববার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিনের চিকিৎসকদের নিয়ে আসা হয়েছিল। তারা দগ্ধদের দেখে গেছেন এবং কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
এস এম আইউব হোসেন জানান, লঞ্চে আগুনের ঘটনায় ২২ জন দগ্ধ রোগীকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল। তাদের ১৪ জন পুরুষ, ৮ জন নারী। এর মধ্যে হাবিব খান নামে এক জন মারা গেছেন, ছয় জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫ জন এখন ইনস্টিটিউটে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন-
- লঞ্চে আগুন: দগ্ধ আরও এক জনের মৃত্যু
- আগুন লাগার পরও নদীতে এক ঘণ্টা চলেছিল লঞ্চটি
- লঞ্চের আগুনে দগ্ধ স্বজনদের দেখতে গিয়ে প্রাণ গেল ২ জনের
- লঞ্চে আগুন: ৪০ জনের মরদেহ হস্তান্তর, ৪ জনের পরিচয় শনাক্ত
- শেবাচিম হাসপাতালে বন্ধ বার্ন ইউনিট, দগ্ধদের চিকিৎসা সার্জারিতে
- ‘বউ আর ৩টা বাচ্চা বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও বলতে পারছি না’
- লঞ্চে আগুন: নানীর মৃত্যুর খবরে বাড়িতে, ফেরার পথে হারালেন মেয়েকে
এই ১৫ জনের মধ্যে তিন জন ভর্তি রয়েছেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। তারা হলেন শাহিনুর খাতুন (৪৫), তার শরীরের ২৫ শতাংশ দগ্ধ; মারুফা (৪৮), তার শরীরের ১৫ শতাংশ দগ্ধ; এবং মনিকা রানী (৪০), ৩০ শতাংশ দগ্ধ। অন্যদিকে এইচডিইউতে ভর্তি দু’জন হলেন— জিয়াসমিন আক্তার (৩৫) ও তার ছেলে তামিম হাসান (৮)। এর মধ্যে জিয়াসমিনের শরীরের ১২ শতাংশ ও তামিমের শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ।
এর বাইরে বার্ন ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে যারা ভর্তি রয়েছেন তারা হলেন— বাচ্চু মিয়া (৫১), ইশরাত জাহান সাদিয়া (২২), সেলিম রেজা (৪৫), লামিয়া (১৩), মমতাজ বেগম (৭০), রাসেল (৩৮), বঙ্কিম মজুমদার (৬০), গোলাম রাব্বি (২০), খাদিজা আক্তার (২৭) ও মো. বশির (৩৫)। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মিলন হোসেন (৩৮)।
বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে যাদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তারা হলেন— সাইফুল্লাহ মানসুর সাদিক (১৬), তৌহিদুল হক (৪৫), তানজিল হোসেন তুষার (১৯), আল নোমান আলিফ (১৯) ও আবদুর ছাত্তার (৩৮)।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনার পথে ছেড়ে যায় এমভি অভিযান-১০। দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর গাবখান ধানসিঁড়ি এলাকায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। ওই লঞ্চ থেকে ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার আরও দু’জন মারা গেছেন পরে। গুরুতর দগ্ধ কমপক্ষে ৯০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যুগ্মসচিব তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। আর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর