লঞ্চ দ্রুত তীরে ভেড়ালে এত প্রাণহানি হতো না: ফায়ার সার্ভিস
২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৫০
বরিশাল: সুগন্ধা নদীতে অগ্নিকাণ্ডের শিকার এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে পর্যাপ্ত পরিমাণে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি ছিল না। আগুন লাগার পর দ্রুত লঞ্চটিকে তীরে ভেড়াতে পারলে যাত্রীরা নেমে যাওয়ার সুযোগ পেত বলেও মনে করছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের এসব কথা বলেন। এর আগে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ঝালকাঠিতে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটি পরিদর্শন করেন।
আগুনে পুড়ে যাওয়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ পরিদর্শন করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর বলেন, আগুন লাগার পর জাহাজের চালক বা স্টাফরা অতি দ্রুত লঞ্চটি কিনারায় ভিড়িয়ে নোঙর করতে পারলে বহু যাত্রী নেমে যাওয়ার সুযোগ পেতেন। তাতে অনেক প্রাণহানি কমে যেত। কিন্তু সেই কাজটিও লঞ্চের চালক ও স্টাফরা করেননি।
লঞ্চে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার ঘাটতি ছিল বলেও প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিনির্বাপনের উপযোগী পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ছিল না। যদি থাকত, তাহলেও এত হতাহত হতো না।
আরও পড়ুন-
- লঞ্চে আগুন: দগ্ধ আরও এক জনের মৃত্যু
- লঞ্চে আগুন: বরগুনায় গণকবরে ৩০ জনকে দাফন
- আগুন লাগার পরও নদীতে এক ঘণ্টা চলেছিল লঞ্চটি
- লঞ্চের আগুনে দগ্ধ স্বজনদের দেখতে গিয়ে প্রাণ গেল ২ জনের
- লঞ্চে আগুন: ৪০ জনের মরদেহ হস্তান্তর, ৪ জনের পরিচয় শনাক্ত
- শেবাচিম হাসপাতালে বন্ধ বার্ন ইউনিট, দগ্ধদের চিকিৎসা সার্জারিতে
- ‘বউ আর ৩টা বাচ্চা বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও বলতে পারছি না’
- লঞ্চে আগুন: নানীর মৃত্যুর খবরে বাড়িতে, ফেরার পথে হারালেন মেয়েকে
আগুন নেভাতে লঞ্চের কর্মীরা পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেননি জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর বলেন, নদীর পানি ব্যবহার করেই পাম্প মেশিনের মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যেত। ফায়ার পাম্প ও হোসপাইপের ব্যবস্থা ঠিকঠাক থাকলে সেটি কঠিন কাজ হওয়ার কথা না। কিন্তু তারা (লঞ্চের স্টাফ) সেটিও করেননি। করলে আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি হতো না।
কীভাবে আগুন লেগেছে, সে বিষয়ে কিছু জানা সম্ভব হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এই পরিচালক বলেন, ফায়ার সার্ভিস বিষয়ট নিয়ে তদন্ত করছে। তদন্তের কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষ করতে সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে। এরপর আমরা বিস্তারিত বলতে পারব।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিটিএ) বরিশাল অঞ্চলের কর্মকর্তাদের একটি দলও এদিন দুপুরে অভিযান-১০ লঞ্চ ঘুরে দেখেন। এসময় বরিশাল নৌযান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাহারুল আমীন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, লঞ্চটিতে আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত ছিল না। সব লঞ্চেই ওপরে বিলাসবহুল ব্যবস্থা থাকে, কিন্তু ইঞ্জিন রুমে নিরাপত্তা জন্য কিছুই থাকে না।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনার পথে ছেড়ে যায় এমভি অভিযান-১০। দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর গাবখান ধানসিঁড়ি এলাকায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। ওই লঞ্চ থেকে ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার আরও দু’জন মারা গেছেন পরে। গুরুতর দগ্ধ কমপক্ষে ৯০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ১৫ জন ভর্তি আছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। তাদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যুগ্মসচিব তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। আর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
সারাবাংলা/টিআর