ইঞ্জিন রুম থেকেই আগুন, অভিযান লঞ্চের চালক ‘ঠিক ছিল না’
২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৫১
বরগুনা: ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের দিন লঞ্চের চালকও ঠিক ছিলো না। কাগজপত্রে ওইদিন লঞ্চ যে মাস্টারের চালানোর কথা তিনি সেদিন রাতে লঞ্চ চালাচ্ছিলেন না।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে বরগুনার সার্কিট হাউস মিলনায়তনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির টিম বরগুনায় আসেন। পরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে এসে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তোফায়েল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তদন্ত দলের প্রধান তোফায়েল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্তে প্রাথমিক ভাবে আমরা অভিযান-১০ লঞ্চের ইঞ্জিনে কিছু ত্রুটি পেয়েছি। এছাড়া কাগজে কলমে লঞ্চটি যে মাস্টারের চালানোর কথা ছিল তিনি চালাচ্ছিলেন না বলে জানা গেছে।’
লঞ্চ দ্রুত তীরে ভেড়ালে এত প্রাণহানি হতো না: ফায়ার সার্ভিস
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তদন্ত দল জানতে পেরেছে আগুন লাগার সময় লঞ্চটির প্রধান দরজা বন্ধ ছিল। তাই যে যেভাবে পেরেছে জানালা দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে। এখনও তদন্ত চলমান তাই এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। আমরা তদন্তের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারবো বলে আশা করছি।’
আরও পড়ুন:
- লঞ্চে আগুন: বরগুনায় গণকবরে ৩০ জনকে দাফন
- আগুন লাগার পরও নদীতে এক ঘণ্টা চলেছিল লঞ্চটি
- লঞ্চের আগুনে দগ্ধ স্বজনদের দেখতে গিয়ে প্রাণ গেল ২ জনের
- লঞ্চে আগুন: ৪০ জনের মরদেহ হস্তান্তর, ৪ জনের পরিচয় শনাক্ত
- শেবাচিম হাসপাতালে বন্ধ বার্ন ইউনিট, দগ্ধদের চিকিৎসা সার্জারিতে
- ‘বউ আর ৩টা বাচ্চা বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও বলতে পারছি না’
- লঞ্চে আগুন: নানীর মৃত্যুর খবরে বাড়িতে, ফেরার পথে হারালেন মেয়েকে
বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চটির মাস্টার প্রশিক্ষিত কিনা তা খতিয়ে দেখাসহ নৌযানটিতে কারিগরি কোনো ত্রুটি ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
তোফায়েল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা এখনও মাঠে কাজ করছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি, ছবি তুলছি। আমরা আরও কয়েক দিন মাঠে কাজ করব। তারপর ঢাকায় গিয়ে প্রাপ্ত তথ্য ও সব বিষয় পর্যালোচনা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করব। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ২২ জন প্রত্যক্ষদর্শীর আলাদা আলাদা জবানবন্দি নিয়েছে।’
বরগুনার সার্কিট হাউস মিলনায়তনে এসময় উপস্থিত ছিলেন- নৌপুলিশের বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন, বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানসহ অন্যরা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনার পথে ছেড়ে যায় এমভি অভিযান-১০। দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর গাবখান ধানসিঁড়ি এলাকায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে। ওই লঞ্চ থেকে ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার আরও দু’জন মারা গেছেন পরে। গুরুতর দগ্ধ কমপক্ষে ৯০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ১৫ জন ভর্তি আছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। তাদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
সারাবাংলা/এমও