Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নদী-খাল পুনঃখনন প্রকল্পে আসছে দ্বিতীয় সংশোধনী

জোসনা জামান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৫০

ফাইল ছবি

ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়গুলোর পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বছরব্যাপী সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এজন্য ‘৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রস্তাবটি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মোট ২ হাজার ২৭৯ কোটি ৫৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ২ হাজার ২৭১ কোটি ১৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বর হতে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে প্রথম সংশোধিত আরডিপিপি বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন করে। বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় ৬৬৮টি কাজ বৃদ্ধি করে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ সংশোধনীতে প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬৯ কোটি ৭৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। যা মূল অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের চেয়ে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা কম।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়গুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বছরব্যাপী সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা। প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়গুলোর আনুমানিক ৬ লাখ হেক্টর এলাকার নিষ্কাশন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বন্যা ও জলাবদ্ধতা ঝুঁকি কমিয়ে আনা হবে। পুনঃখননের মাধ্যমে ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়গুলো পুনরুজ্জীবিত করা, নাব্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার নৌ চলাচলের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়গুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়িত করে মৎস্য চাষের উন্নয়ন করা, ছোট নদী, খাল এবং জলাশয়গুলোর উভয় তীরে বনায়ন করা এবং খনন করা মাটি দ্বারা ছোট নদী, খাল ও জলাশয়গুলোর উভয় তীরে ভূমি উন্নয়ন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এদেশে প্রবাহিত হচ্ছে অসংখ্য নদ-নদী। এদেশের আয়তন প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। যার মাধ্যমে প্রায় ৯ হাজার ৭৩৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদ নদী, খাল বিল, ঝিল ও হাওর তথা মুক্ত জলাশয়। এ সব খাল, নদী ও জলাশয় সুপেয় পানির ধারক। এ আধারের পানি কৃষি কাজে ব্যবহার করা হয়। জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় পানির প্রয়োজন অপরিসীম। দেশের মোট ভূমির শতকরা ৮০ ভাগ প্লাবন ভূমি, যা বর্ষায় প্লাবিত হয়। আবার বাংলাদেশের জলবায়ু ও ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে বর্ষাকালে প্রায় প্রতিবছরই বন্যা হয় এবং দেশের অধিকাংশ ভূমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি বড় ও মাঝারি নদীর পাড় ভাঙ্গনসহ অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি, ফসল, ঘরবাড়ি ইত্যাদি সম্পদ হুমকির মুখে পড়ে।

পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এ তিনটি বৃহৎ নদী প্রণালীর মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় এক বিলিয়ন টন পলি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে । এ রিভার সিস্টেমের মাধ্যমে পলি ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শাখা ও উপ নদীতে । ফলে নদী ও খাল গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে নদীর নাব্যতা, কমে যাচ্ছে সেচ দেয়ার জন্য পানির প্রাপ্যতা। কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে এবং আর্সেনিকের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে ফসলহানি এবং খাল, জলাশয়, ছোট নদী ভরাটের ফলে জীব-বৈচিত্র্য ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের বন্যা প্রতিরোধ, নদীর নব্যতা বৃদ্ধিসহ নদী নালা, খাল বিল রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রী এগুলি পুনঃখনন তথা ড্রে–জিং কাজ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার জন্য দেশের ছোট নদী ও খাল গুলো পুনঃখননের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

পিইসি সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে মোট ৪৪৮ টি আইটেমের (ছোট নদী৮৮টি, খাল ৩৫২টি এবং জলাশয় ৮টি) বাবদ ২ হাজার ১৮৩ কোটি ৩৫ লাখ ২৮ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ৫১১টি আইটেমের (ছোট নদী ১০০টি, খাল ৩৯৬টি এবং জলাশয় ১৫টি) বাবদ ২ হাজার ২৭১ কোটি ১৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছিল। বর্তমানে দ্বিতীয় সংশোধন (প্রস্তাবিত) ৬৬৮টি আইটেমে (ছোট নদী ১০৯টি, খাল ৫৩৩টি এবং জলাশয় ২৬টি) কাজ বাবদ ২ হাজার ২৬৯ কোটি ৭৪ লাখ ৫১ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এছাড়া এসব খাতে ভৌত কাজের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সভায় যৌক্তিক ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

সারাবাংলা/জেজে

নদী-খাল পুনঃখনন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর