‘বিদায় বেলায়ও হুদা কমিশনের দৃষ্টান্তে রক্ত ও মানুষের লাশ’
২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:৫৩
ঢাকা: কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে হতাহতের ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই বিদায় বেলায়ও হুদা কমিশন যে দৃষ্টান্ত দেখাল, সেই দৃষ্টান্তেও রক্ত এবং মানুষের লাশ।’
জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) ৪৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আজকে আমরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। আজকে জাসাসের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর যে আনন্দ, সেই আনন্দ তারা উদযাপন করতে পারছে না। কারণ, তাদের প্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের প্রতীক, গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আজকে সারা দেশের দাবি, তাকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। অথচ এত নির্দয়, নিষ্ঠুর সরকার, যিনি গণতন্ত্রকে অন্ধকার গুহা থেকে উদ্ধার করেছেন, সেই নেত্রীকে তারা ভয়ংকর রকম কষ্ট দিচ্ছে।
‘আজকে নাগরিক সমাজ, সুশীল সমাজ, সমস্ত রাজনৈতিক দল দাবি করেছে, বুদ্ধিজীবীরা দাবি করেছে যে, মহান স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, যিনি বার বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, যিনি কোনো দিন আপস করেন নি, তাকে চিকিৎসা না দিয়ে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে’—বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আজকে দেখুন কয়েক ধাপে ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। সেই ইউপি নির্বাচনে প্রায় দেড় শতাধিক খুন হয়েছে। আজকে রাষ্ট্রপতি সংলাপের কথা বলেন নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য। কীসের সংলাপ? কী নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এই নির্বাচন কমিশন তো আপনারাই গঠন করেছিলেন। আমরা তার প্রতিফলন দেখছি জনপদের পর জনপদে। বিভিন্ন ইউনিয়নে রক্ত ঝরছে, মানুষের জীবন ঝরছে। গতকালও তিনজন নিহত হয়েছে। এই হচ্ছে চালচিত্র।’
রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতার লোভে তারা এত উন্মত্ত যে, তাদের আর কাণ্ডজ্ঞান নেই। একটা পদ পাওয়ার জন্য, বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য, নিজেরা নিজেরা খুনোখুনী হয়ে মরছে। সুতরাং এই বিদায় বেলায়ও হুদা কমিশন যে দৃষ্টান্ত দেখাল, সেই দৃষ্টান্তেও রক্ত এবং মানুষের লাশ। সুতরাং রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ করছে, সেই সংলাপের উদ্দেশ্যেই হচ্ছে আরেকটি হুদা মার্কা নির্বাচন কমিশন, আরেকটি রকিব মার্কা নির্বাচন কমিশন করে একই কায়দায় দিনের ভোট রাতে অথবা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এবং বিনা ভোটের নির্বাচন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা। কিন্তু এটি আর এ দেশের জনগণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে না, তারা আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘এ দেশের সকল নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী সমাজ, সাংস্কৃতিক সংগঠন রুখে দাঁড়িয়েছে। তাদের কণ্ঠের প্রদীপ্ত আওয়াজ নিয়ে আজ রাজপথে দাঁড়ানোর দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে।’
জাসাস নেতাদের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এই দিনে শুধু এটুকুই বলব, আজকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতন্ত্রের যিনি প্রতীক তাকে কারামুক্ত করে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, কথা বলতে ভয় লাগে, চলাচল করতেও ভয় লাগে এবং বিরোধী রাজনীতির কর্মকাণ্ড পালন করতে গিয়ে যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে মানুষকে মুক্ত করতে সবাইকে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে। সেখানে কেবল রাজনৈতিক সংগঠন নয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর দায়িত্ব অপরিসীম। কারণ, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর গান, কবিতা, অভিনয় দিয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এই ভয়ংকর দুরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ