‘খালেদার জিয়ার আগের আবেদন পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই’
২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৫৯
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া বিষয়ক আবেদন পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা নিজের হাতে নেই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দরখাস্ত শর্তযুক্ত শর্তে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সরকারকে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। অনেকে বলছেন, ওই দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগের কথা। কিন্তু সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আমি বারবার বলে আসছি, একটি নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা আমার নেই।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২১-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ক্র্যাব সভাপতি মিজান মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আরিফ।
অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, যে মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেই মামলা কিন্তু আওয়ামী লীগ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। ২০১২ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সেই মামলার প্রতিবেদন দেয়। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালীন তারা অন্তত ১০ বার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদন করেছে মামলা স্থগিত করার জন্য। অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। সবকিছুর পর রায় হয়েছে। একটি মামলায় বিচারিক আদালতে সাজা ৫ বছর, হাইকোর্টে সেটি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। আরেকটি মামলায় পরে খালেদা জিয়ার আরও সাত বছর সাজা হয়েছে।
‘তিনি (খালেদা জিয়া) যখন সাজা ভোগ করছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই কিন্তু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দু’টি বিশেষ শর্তে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেন। অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত হয়েছে তার,’— বলেন অ্যাডভোকেট আনিসুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার যে আবেদন সেটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সেটি পুনর্বিবেচনা করার ক্ষমতা আমার হাতে নেই। তবে পুনরায় যদি একটি দরখাস্ত করা হয়, সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমি এখানেও বলছি, সংসদেও বলেছি— শর্তযুক্ত শর্তে তিনি সাজা স্থগিতে যে মুক্তি পেয়েছেন, সেটি যদি না মেনে পুনরায় জেলের যেতে চান, সেটিও একটি পথ হতে পারে। কিন্তু এই অবস্থায় ফৌজদারি কার্যবিধির কোথাও নেই যে তাকে আমরা আগের দরখাস্ত বিবেচনা করে বিদেশ যাওয়ার সুবিধা করে দিতে পারি।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর প্রসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার কথা অনেকেই উল্লেখ করে থাকেন। সে প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু কখনো বলিনি যে তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে পাঠানো যাবে না। কিন্তু একবার নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত আবার পুনর্বিবেচনার সুযোগ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় নেই।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতাল তার (খালেদা জিয়া) সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা সম্প্রতি সর্বাধুনিক প্রযুক্তির একটি একটি ক্যাপসুলও আমদানি করেছেন, যেটি গিলে ফেললে ভেতরে গিয়ে ক্যামেরা কাজ করবে। ভেতরের সবকিছু ক্যামেরাবন্দি হবে। আমি তার সবশেষ অবস্থা জানি না, তবে যতটুকু জানি— আগের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখানে তিনি যতটুকুসম্ভব সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। এখানে সরকারের কোনো হাত নেই। তারা যেভাবে চান সেভাবে তার চিকিৎসা হচ্ছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাচ্ছেন আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর)। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে কোনো বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, দু’টি বিষয়ে কখনো রাষ্ট্রপতিকে কাউে জিজ্ঞাসা করতে পারেন না— প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ। এগুলো তার সর্বময় ক্ষমতা। যে কাজটি রাষ্ট্রপতির, সেটির কথা আমি কী করে বলব! আমি তো সরকারের মন্ত্রী। বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি তার সুবিবেচনা ও আইন অনুযাযী ক্ষমতার প্রয়োগ করে যা ভালো মনে হবে, তাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমি মনে করি, আপিল বিভাগে অনেকেরই প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। আর সরকারে এসব নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কোনো একটি ঘটনা ঘটলে আমরা নিজস্ব চ্যানেলে খবর নিই, সেভাবেই খবর দিতাম। এখন সাংবাদিকরা অনেক কিছু জানছে, আবার সোস্যাল মিডিয়াতে আগে চলে আসছে। যে কারণে সাংবাদিকতাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকদের সুবিধার জন্য র্যাব মিডিয়া সেন্টার কারওয়ান বাজারে আনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। এ দেশের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে, নির্যাতনকারীদের বিপক্ষে, বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করার দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। সব কথাই আমরা বলব, লিখব। তবে সবই আমরা করব ন্যায়ের পক্ষে থেকে। এ ক্ষেত্রে রিপোর্টারদের দায়িত্ব অনেক বেশি।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর