‘কিশোরীদের অনিবার্য শারীরিক প্রক্রিয়া নিয়ে ভীতি-কুশিক্ষা নয়’
২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:৫৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অনিবার্য শারীরিক প্রক্রিয়া নিয়ে কিশোরীদের ভীতি ও সাামজিক প্রতিবন্ধকতা কাটাতে প্রাপ্তবয়স্কদের সহযোগিতার ওপর গুরুত্বের কথা এসেছে চট্টগ্রামে এক সভায়। শারীরিক পরিবর্তনের সময়টুকুতে কোনো ধরনের কুশিক্ষা না দিয়ে সঠিক জ্ঞানের মধ্য দিয়ে কিশোরীদের আগামী দিনের আলোকিত মা হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বানও এসেছে ওই সভায়।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) নগরীর মোটেল সৈকতে প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা ও নারীর অধিকার নিয়ে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)। সভায় বিএনপিএস–এর ‘আওয়ার লাইভস, আওয়ার হেলথ, আওয়ার ফিউচার’ প্রকল্পের অংশীজনেরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, ‘বয়ঃসন্ধিকাল পেরিয়ে একজন কিশোরী তার পূর্ণাঙ্গ জীবনে যখন প্রবেশ করে, তখন তার শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তন নিয়ে প্রথমে কিশোরীদের মধ্যে ভীতি কাজ করে। আবার সামাজিকভাবেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আসে। এই সময়টুকুতে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক কাজ থেকে বিরত রাখা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো— এটি একটি অনিবার্য শারীরিক প্রক্রিয়া। এটি একদমই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া। এসময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রাপ্তবয়স্কদের তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা।’
‘প্রাপ্তবয়স্করা এগিয়ে এলে কিশোর–কিশোরীরা কুশিক্ষা পাবে না। তাদের মধ্যে যদি প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকে, তাহলে কিশোরীদের মধ্যে অসুস্থতা এসে যাবে। এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি হয়। এই কিশোরীরাই একদিন মা হবে। আলোকিত মা হতে হলে তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে হবে,’— বলেন তিনি।
বিএনপিএস তিন পার্বত্য জেলায় প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক ব্যবস্থাপনা ও নারীর অধিকার নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং সিমাভি নেদারল্যান্ডসের কারিগরি সহযোগিতায় ১০টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা দিচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলার ১৭ উপজেলায় ১২ হাজার কিশোরী ও যুব নারীকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পের কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পার্বত্য অঞ্চলে এ ধরনের কার্যক্রমে নানা প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, ‘অন্য এলাকায়ও বাধা আছে, তবে পার্বত্য অঞ্চলে বেশি। এমনকি মাঠ পর্যায়ে নানা বাধা আসতে পারে। তাদের বলতে হবে, কিশোরীদের তাদের পড়শী, বোন, স্বজনরা যেন সহযোগিতা করেন। সেখানে সামাজিক নানা সংস্কার আছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংস্কার ও আচরণকে সম্মান করেই প্রতিবন্ধকতা জয়ে এগিয়ে যেতে হবে।’
সভায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলার জনগোষ্ঠী এখনো অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। শিক্ষা, উন্নয়ন ও অধিকারে পার্বত্য জনগোষ্ঠী এখনো অনেক পিছিয়ে। বিএনপিএস সেই পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে কাজ করছে। এই কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপপরিচালক ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. ছেহেলী নার্গিস, বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংসুই প্রু মারমা, খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. নুপুর কান্তি দাশ, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বান্দরবানের উপপরিচালক ডা. অং চালু, রাঙ্গামাটির উপপরিচালক আনোয়ারুল আজিম ও খাগড়াছড়ির উপপরিচালক এমরান হোসেন চৌধুরী, রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মামুন, বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট সুরাইয়া আক্তার সুইটি, খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে এম ইয়াসির আরাফাতও সভায় বক্তব্য রাখেন।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক সঞ্জয় মজুমদারের সভাপতিত্বে এবং সুমিত বণিকের সঞ্চালনায় প্রকল্প সহযোগীদের মধ্যে উন্নয়ন সংস্থা তাজিংডংয়ের নির্বাহী পরিচালক চিং সিং প্রু, প্রগেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা, তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রিপন চাকমা এবং কিশোরী ক্লাব সদস্যদের পক্ষে ডলি প্রু মারমা, বিশাখা ত্রিপুরা ও ম্যামাচিং ত্রিপুরা বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর