জমে উঠেছে নাসিক নির্বাচন, প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:০৮
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ভোটের মাঠ। এবারের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী না দিলেও মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। তবে বিএনপির কিছু প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। প্রচার-প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। প্রত্যেক প্রার্থীই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়াচ্ছেন। জনগণকেও এলাকার উন্নয়নের জন্য দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো নির্বাচনী এলাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নাসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে দিন-রাত সময় দিচ্ছেন। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে দোকানপাট ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে এলাকার রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করবেন এমন ব্যক্তিকেই ভোট দিতে চান ভোটাররা।
শহরের মুক্তিনগর এলাকার মোহাম্মদ হোসেন, সালেনগর এলাকার ইসমাইল হোসেনসহ অনেকে জানান, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই আমরা ভোট দেবেন তারা। যিনি সুখে-দুঃখে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবেন তাকেই ভোট দেবেন তারা।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, নাসিক নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী লড়াই করছেন। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা), খেলাফত মজলিসের প্রার্থী এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ (হাত পাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন (বট গাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ রাশেদ ফেরদৌস (হাত ঘড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম বাবু (ঘোড়া)। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, জনগণ এবার ইসলামী শক্তিকে বিজয় করার জন্য বদ্ধপরিকর। হাতপাখার যেভাবে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারলে বিজয় আমাদের হবে ইনশাআল্লাহ।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, আমি মানুষের ভালোবাসায় প্রার্থী হয়েছি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স সবচেয়ে বেশি। এখানে নাগরিক সুবিধা কম। সিটি করপোরেশন ২২ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স নেয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম নেয় ১৪ শতাংশ। আমি জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন করছি। জনগণ আমার সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এর আগে আমি একটি দল থেকে নির্বাচন করছিলাম। তাই আমাকে বসে যেতে হয়েছে। এবার আমি জনগণের প্রার্থী।
তিনি আরও বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন কেন আমি দাঁড়িয়েছি। আমি জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি করলেও নারায়ণগঞ্জের জনগণের চাহিদা ও তাদের আকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে আমাকে সচেতন থাকতে হয়। জনগণের প্রয়োজনেই আমাকে এখানে নির্বাচনে দাঁড়াতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতিকের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, নৌকা মানেই উন্নয়ন, নৌকা মানেই জনগণের কল্যাণ। আমি মনে করি, নারায়ণগঞ্জবাসী আবারও আমাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। আমার দলের নেতাকর্মীরা আমার জন্য কাজ করছে। আওয়ামী লীগের কোনো লোক নৌকার বাইরে যেতে পারে না। আমরা বরাবরের মত এবারও জয়যুক্ত হব আশা করছি। ২০১৬ সালেও আমি নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়যুক্ত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিপক্ষ প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। ওয়াসার পানির দাম আমি বৃদ্ধি করি নাই। আমি অনেক রাস্তা-ঘাট করে দিয়েছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২৭টি ওয়ার্ডে গাড়ি নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন, সেই রাস্তাগুলো আমার সময়ে করা হয়েছে। আমি বলব সত্য বলুন- কারণ, ভোটের পরে আমরা সবাই এক সঙ্গেই থাকব। বিগত দিনে আমি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমি আশা করি এবারও জনগণ আমার সঙ্গে থাকবে।
অপরদিকে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিযেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার কাজ চালানোর জন্য ১৮ দিন সময় দিয়েছে নির্বাচন কমিশন, যা বিগত নির্বাচনের চেয়ে দুদিন বেশি। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে। কেউ নির্বাচনী আচরণ লঙ্ঘন করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ১৮৭টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। এ নির্বাচনে ইভিএম’এ ভোট দিবেন ভোটাররা।
এর আগে, গত ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দলীয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। ওই নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে প্রায় ৮০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।
সারাবাংলা/এনএস