Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভবিষ্যতে সবাইকে নিজের কাজ নিজে করে খেতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:০৪

ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতে সবাইকে নিজের কাজ নিজে করে খেতে হবে। একজন বসে হুকুম দেবে, এই এক গ্লাস পানি দে তো, সেটা বলতে পারবে না। সে কাজের লোক পাবে না বাড়িতে। এটা আমার ছোট বেলার থেকেই একটা আকাঙ্খা ছিল যে, বাংলাদেশে সমাজটাকে এমনভাবে গড়ে তোলা। কেউ যেন আর কাউকে হুকুম দিতে না পারে, নিজের কাজ যেন নিজে করতে পারে।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও তৎসংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান প্রতিবেদন হস্তান্তর ও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্ত যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২০২১ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও তৎসংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান প্রতিবেদন স্ব স্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানদের হাতে হস্তান্তর করেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক হাতে তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলকে। খুব চমৎকারভাবে সে বলেছে যে কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা উচিত না। সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটা কাজের একটা মর্যাদা আছে। কাজকে সম্মান দিয়ে দেখা, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেই শিক্ষাটাও আমাদের ছেলেমেয়েদের ছোটবেলা থেকেই দেখাতে হবে, করতে হবে যে নিজের কাজ নিজে করা বা নিজের কোনো কাজকে ছোট করে না দেখা। এই বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, একজন কৃষকের ছেলে যখন বড় অফিসার হয়ে যায় তখন বাবাকে তার নামের পরিচয় দিতে তার লজ্জা পায়, এটা সত্যি খুব দুঃখজনক। খুব লজ্জাস্কর ব্যাপার। বরং সেই বাবাকে আরও বেশি সম্মান দেওয়া উচিত। যে বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানকে শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে। তাকেই সব থেকে সম্মান দেওয়া উচিত। বরং তার সঙ্গে মাঠে নেমে মাঠে কাজ করা উচিত এবং তার শিক্ষা থেকেই কিন্তু আমাদের আরও অধিক ফসল ফলানো বা আরও কিভাবে কাজ করা যায় সেইটা দেখা উচিত। তাহলে সেটা প্রকৃত শিক্ষা হবে।

তিনি বলেন, নিজে দুই পাতা পড়ে একটা ফুল প্যান্ট পড়ার পর আর মাঠে নামতে পারব না, এই মানসিক দৈন্যতাটা বাংলাদেশের মানুষের মাঝে থাকুক সেটা আমরা চাই না। সেটা আমরা দেখতে চাই না। আমার দৃষ্টিতে এটা একটা মানসিক দৈন্যতা, মানসিক দারিদ্র্যতা। এটা যেন না থাকে। সমস্ত কাজকেই সম্মান দিতে হবে।

করোনাকালে দলের নেতাকর্মীরা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার করোনাকালে কৃষকরা ধান কাটার লোক পাচ্ছে না। আমরা যখন প্রথম ছাত্রলীগকে বললাম, যে তোমাদের ধান কাটতে যেতে হবে। সবাই উৎসবমুখর ভাবে কৃষকের পাশে যেয়ে ধান কেটেছে, ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। আমার দলের অন্যান্য স্তরের নেতাকর্মীরাও কিন্তু নেমেছে মাঠে, তো এটাই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা। এভাবেই সব কাজকেই গুরুত্ব দিতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমাদের গড়ে উঠতে হবে। তাই সেই প্রশিক্ষণও আমাদের এখন থেকে দেয়াও শুরু করতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়গুলি নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, যেকোনো কাজ কেউ যদি না করে আমরা অচল হয়ে যাই। তবে ভবিষ্যতে এই দেশে এই অবস্থা থাকবে না। একজন বসে হুকুম দেবে, এই এক গ্লাস পানি দে তো সেটা বলতে পারবে না। সে কাজের লোক পাবে না বাড়িতে। নিজের কাজ নিজে করে খেতে হবে। এটা আমার ছোটবেলা থেকেই একটা আকাঙ্খা ছিল যে, বাংলাদেশে সমাজটাকে এমনভাবে গড়ে তোলা কেউ যেন আর কাউকে হুকুম দিতে না পারে, নিজের কাজ যেন নিজের করতে পারে। তবে করোনা অবশ্যই সেই শিক্ষাটা কিছুটা হলেও মানুষকে দিয়েছে। এটা হল বাস্তবতা। কারণ তখন আর কাজের বুয়াও আসতে পারে নাই। নিজের কাজ নিজেই করতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজটা করার সময় নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে করতে হবে। মহিলারা শুধু সংসারের কাজ করবে আর পুরুষরা সাহায্য করবে না, সেটা যেন না হয়। সবাইকে সব কাজ করতে হবে, পাশে থাকতে হবে। ছেলেমেয়েদেরও বাবা-মায়ের পাশে থাকতে হবে। সংসারের কাজে হাত দিতে হবে। মাকে সাহায্য করতে হবে। সেটাই প্রকৃত শিক্ষা।

এসময় আমি অনেক কথা বললাম, বুড়া মানুষ তো একটু বেশি কথা বলি বলেও হাস্যরস করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি ছোট্ট সোনামণিদের ধন্যবাদের পাশাপাশি অভিনন্দন জানান, দোয়া ও আর্শীবাদ করেন। তিনি বলেন, তারা বড় হবে, লেখাপড়া শিখবে আর আমরা বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশকে উন্নত দেশ করতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তিনি চেয়েছিলেন সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ। সেই সোনার মানুষ হবে আজকের শিক্ষার্থীরা। আগামী দিনে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। সেটা তারা বাস্তবায়ন করবে।

নতুন বই পেয়ে সবাই পড়াশোনা করবে মনোযোগী হবে সেই আশাবাদও ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।

এসময় বিআইসিসি প্রান্তে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

সারাবাংলা/এনআর/এসএসএ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর