Monday 21 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রাজনীতিবিদদের তুলনায় আমলারা অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদী’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৪৭

ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, এই অঞ্চলে রাজনীতিবিদদের তুলনায় আমলারা অনেক বেশি কর্তৃত্ববাদী। আমাদের দেশেও আমলারা কর্তৃত্ববাদী। কেননা আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য ফুলের মালা আর দুধ নিয়ে বসে থাকি। তাদের আহ্বান জানাই এদেশে এসে বিনিয়োগ করার জন্য। কিন্তু তারা যখন বিমানবন্দরে নামেন তখন হয়রানির শিকার হন। বিদেশিরা চায় দ্রুত ইমিগ্রেশন, লাগেজ যাতে দ্রুত পায়। কিন্তু এসব কাজই এখানে অনেক দেরি হয়। এছাড়াও বিনিয়োগ করতে গিয়ে আমলাতন্ত্রের মধ্যে পড়ে যায়- এ রকম উদাহরণ আরও আছে। প্রধানমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের বলেন, আসুন, বিনিয়োগ করুন। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এসে আমলাতন্ত্রের কাছে মার খান।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সেমিনার, প্রকাশনা ও বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

ডিজেফেবি’র সভাপতি হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিকল্পানা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। ‘এলডিডিসি উত্তরণ: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন পলিসি রিসার্স ইস্টিটিউটের (পির্আআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, শরিফা বেগম এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আব্দল বাকী।

ডিজেএফবি’র সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে দুই ক্যাটাগরিতে চার জনকে বেস্ট রিপোর্টি অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন- পত্রিকা ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে সময়ের আলোর এম আর মাসফি, বিজনেস পোস্টের রফিকুল ইসলাম। টেলিভিশন ও অনলাইন ক্যাটাগরিতে এনটিভির হাসানুল শাওন এবং যমুনা টিভির তৌহিদ পাপন।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘দারিদ্র নিরসনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে। এজন্য আমাদের দক্ষতা ও শ্রমিকের মান বাড়াতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সবসময় বাজার নিয়ে কথা হয়। কিন্তু মাছের বাজার আর তেলের বাজার এক নয়। তেল অর্থাৎ জ্বালানি তেল ও অস্ত্রের বাজার বড় বাজার। এ বাজারের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি বা কম শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এটি আন্তর্জাতিক বিষয়ও।’

বিজ্ঞাপন

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্য কমাতে হবে। এটি না করতে পারলে টেকসই উত্তরণ সম্ভব নয়। এলডিসি উত্তরণের পর বাজার সুবিধা হারানো, স্বল্প সুদে ঋণ প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ হাতছাড়া হবে। এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হলো-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং পরিবহন অবকাঠামোর উন্নয়ন। আমাদের আঞ্চলিক বাজারের দিকে নজর দিতে হবে। মধ্য আয়ের জার্নিতে সচেতন থাকতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে হবে। আমাদের বর্তমান বাজার সুবিধানির্ভর যে প্রতিযোগিতা আছে সেটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এখন দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা নির্ভর প্রতিযোগিতায় যেতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে শোভন কর্মসংস্থান বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাথাপিছু আয়ের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।’

ড. শামসুল আলম বলেন, ‘এলডিসির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেগোসিয়েশন (দরকষাকষি) সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে মূল ভূমিকা নিতে হবে। কেননা এলডিসি উত্তরণ ঘটলে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কাজ করতে হবে। ভিয়েতনামকে আমাদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেননা বণিজ্য ক্ষেত্রে তাদের কাছে অনেক কিছুই শেখার আছে। যেহেতু খনিজ সম্পদ কম তাই আমাদের ধনী হওয়ার একমাত্র পথ রফতানি বাড়ানো। আমাদের এফটিএ, পিটিএসহ নানারকম বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। ইতোমধ্যেই এগুলো নিয়ে কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের আমদানি শুল্ক অনেক বেশি। এগুলো কমাতে হবে। সেইসঙ্গে বাণিজ্য অবকাঠামো সুবিধা আরও বাড়াতে হবে।’

প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুতি ঠিক রাখতে হবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণের পর অন্যতম ইস্যু হচ্ছে প্রতিযোগিতা। সেটি ঠিকই আছে। এজন্য অবশ্যই দরকষাকষির বা আলোচার দক্ষতা বাড়াতে হবে। আমাদের সমস্যা হলো- কিছু চাইতে হলে দিতে হবে। সেটি অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না। অর্থাৎ কোনো দেশ থেকে বাণিজ্য সুবিধা নিতে গেলে তাদেরকেও কিছু না কিছু সুবিধা দিতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের শুল্ক অনেক বেশি। সেগুলো কমানো দরকার।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

আমলা এম এ মান্নান টপ নিউজ পরিকল্পনামন্ত্রী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর