Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ভুঁইফোঁড়’ হেলেনা থেকে মুরাদ-জাহাঙ্গীর— ২১-এ বিব্রত আওয়ামী লীগ

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:২৫

ঢাকা: ২০২১ সাল ছিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের অভিঘাত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। দেশের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্যও সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেই সাংগঠনিক তৎপরতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে এ বছর নানা সময়েই আলোচনায়, বলা ভালো সমালোচনায় উঠে এসেছেন দল সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে যেমন রয়েছেন ‘জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন’ নামের ভুঁইফোঁড় সংগঠন থেকে আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে উঠে আসা হেলেনা জাহাঙ্গীর, তেমনি দর্জি মনির, হেলিকপ্টার সিরাজীর মতো কিছু অপরিচিত মুখও বিব্রত করেছে আওয়ামী লীগকে। বছরের শেষ দিকে এসে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান থেকে শুরু করে গাজীপুরের সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম আলোচনায় সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ আলোচনায় ‘সিস্টার’ হেলেনা

‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ গঠনের ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। নিজেকে সংগঠনের সভাপতি ও মাহবুব মনিরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এই সংগঠনে জেলা-উপজেলা ও বিদেশ শাখায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়। চাকরিজীবী লীগে পদ দেওয়ার নামে তিনি বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পান গোয়েন্দারা। বিতর্কের মুখে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিসহ কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। অভিযোগ ওঠে, রাজনীতি না করলেও স্বজনপ্রীতির নামে এসব পদ হাতিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।

হেলেনা আক্তার তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে বিয়ে করে হেলেনা জাহাঙ্গীর নাম নেন। স্বামীর ব্যবসা দেখার পাশাপাশি নিজেও হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা। নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে গঠিত ‘ইনার হুইল ক্লাব’-এর সদস্য হয়ে হেলেনা সখ্য গড়ে তোলেন রাজনৈতিক মহলে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে প্রয়াত আনিসুল হকের সঙ্গে কাজ করে আলোচনায় আসেন। কয়েক বছরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় উপকমিটি ও জেলা আওয়ামী লীগের পদ-পদবি। বাগিয়ে নেন। ‘জয়যাত্রা’ নামের একটি আইপিটিভির প্রতিষ্ঠাতা এবং আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।

হেলেনা জাহাঙ্গীর আলোচনায় উঠে আসার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতিরও বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তার আর্থিক অনিয়মের খোঁজখবর নিতে শুরু করে। পরে অনুমোদন না থাকা জয়যাত্রা আইপিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়। চাঁদাবাজির মামলায় বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

দর্জি মনির

হেলেনার চাকরিজীবী লীগের মতোই ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামের আরেক সংগঠন নিয়ে আলোচনায় উঠে আসেন মনির খান ওরফে দর্জি মনির। কারসাজি করে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজের ছবি বসিয়ে সেগুলো ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজের স্বার্থসিদ্ধির পাশাপাশি তদবির বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ওঠে তার নামে। তদবির-বাণিজ্য ও জমির দালালি করে অঢেল সম্পদের মালিকও বনে যান এই মনির। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে গ্রেফতার করে।

মনিরের বাসা ঢাকার কেরানীগঞ্জে। তিনি একসময় গুলিস্তান এলাকায় দর্জির দোকানে কাজ করতেন। যে কারণে তার নাম দর্জি মনির। ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিতেন তিনি। বেশিরভাগ সময় মুজিব কোট পরে চলাফেরা করতেন। এখন চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে তিনিও।

বেফাঁস মন্তব্য, ফোনালাপ ফাঁসে মন্ত্রিত্ব হারালেন মুরাদ হাসান

বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে ক’দিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তবে সেগুলোকে রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর ধরে নিচ্ছিলেন অনেকেই। এর মধ্যে ফেসবুক লাইভে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। তার পদত্যাগের দাবিও ওঠে। একদিন পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। চিত্রনায়িকা মাহী ও চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে সেই কথোপকথনে মাহীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়াসহ যৌন সহিংস কথা বলতেও শোনা যায় তাকে।

এর জের ধরে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মুরাদ হাসান মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। দলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। দলের আগামী কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সে বিষয়টি আলোচনায় আসবে বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

আজীবনের জন্য বহিষ্কার মেয়র জাহাঙ্গীর

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান ঘটে জাহাঙ্গীর আলমের। পতন হতেও সময় লাগল না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি ও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি— এমন একটি ক্লিপ ভাইরাল হয় অনলাইনে। গাজীপুরে তার শাস্তির দাবিতে মশাল মিছিল বের হয়। তীব্র সমালোচনার মুখে তাকে শোকজ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। পরে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কার্যনির্বাহী সংসদ। পরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকেও তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলমের রাজনীতি শুরু ছাত্রলীগে। জেলা শাখার সহসভাপতি ছিলেন। এরপর ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য,  সহ-সম্পাদক ও সহ-সভাপতি ছিলেন। এরপর টঙ্গী ও গাজীপুর আওয়ামী লীগের কমিটি হয়ে সবশেষ গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন।

পদ হারিয়েছেন মেয়র আব্বাস

মেয়র জাহাঙ্গীরের মতো প্রায় একই পরিণতি বরণ করতে হয়েছে রাজশাহীর কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস আলীকেও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন তিনি। তিনটি থানায় তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন হয়। সেগুলোকে একটি মামলা হিসেবে গণ্য করে গ্রেফতার করা হয় মেয়র আব্বাসকে। বর্তমানে কারাগারে আছেন তিনি। এর মধ্যেই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পৌর কাউন্সিলরদের অনাস্থার পর তাকে মেয়র পদ থেকেও বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

ডা. মুরাদ হাসান দর্জি মনির মেয়র আব্বাস মেয়র জাহাঙ্গীর সালতামামি হেলেনা জাহাঙ্গীর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর