ভয়ের সংস্কৃতিতে বাস করছি: সুলতানা কামাল
৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৫৯
ঢাকা: সুশাসন ও জবাবদিহিতার অভাবে দেশবাসী এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতিতে বাস করছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। এর ফলে আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য ত্তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টার
সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকার কয়েকটি মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে। আমরা স্বাধীন বোধ করি কি না, নিজেকে সার্বভৌম মনে করি কি না, অধিকার লঙ্ঘিত হলে ন্যায়বিচার পাব কি না কিংবা আমি শান্তিতে সম্মানের সঙ্গে ও নির্ভয়ে জীবনযাপন করতে পারি কি না— এই প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়েই বোঝা যায় আমরা কতটা মানবাধিকার সুবিধা ভোগ করতে পারছি। এসব সূচকে বাংলাদেশ এখনো খুব একটা মানসম্মত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
মানবাধিকার প্রশ্নে মৌলিক সূচকগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান তুলনা করে সুলতানা কামাল বলেন, আশপাশের দেশ যদি মানবাধিকারের এসব মানদণ্ডে একশতে তিন/চার পায় আর আমরা দশ পেয়ে মনে করি অনেক এগিয়ে আছি, সেটি ভুল। কারণ আমরা মূল মানদণ্ড ১০০ থেকে অনেক পিছিয়ে আছি, যা আমাদের বিবাচনায় নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারের সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেই দায়িত্ব পালন করে। প্রশাসন তার একটি। কাজেই মানিবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দায় প্রশাসনের ওপর বর্তায়। অবশ্যই প্রশাসন তার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না বলেই এই লঙ্ঘনগুলো ঘটছে। এখানে জবাবদিহিতার প্রচণ্ড অভাব আছে। আর জবাবদিহিতার অভাবেই সুশাসনের অভাব দেখা দিচ্ছে।
সম্প্রতি কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রসঙ্গে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা ভূ-রাজনীতি থেকে শুরু করে নানা কারণে হতে পারে। এটি হয়তো তুলেও নেওয়া হবে। কিন্তু আমরা ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর থেকেই এটি নিয়ে কথা বলে আসছি। ওই সময় সমাজে অপরাধ, সহিংসতা ও অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার বাস্তবতায় পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ নানা বাহিনীর সমন্বয়ে এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব গঠন হয়। তারা সুযোগ-সুবিধা, দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সব দিকেই সাধারণ বাহিনী থেকে এগিয়ে থাকে। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল এসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে তারা আমাদের সংবিধান ও আইনের মধ্য থেকে সন্ত্রাস দমনে কাজ করবেন, যা পূরণ হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা মানবাধিকারকর্মীরা ওই সময় থেকেই বলে আসছি— র্যাব যেন বিধির বাইরে গিয়ে বিচার বহির্ভূত মৃত্যুর জবাবদিহি করে। তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সজ্জিত করা, অস্ত্র দেওয়া— সবই আমাদের করের পয়সায়। তাই তাদের কাছ থেকে এসব ঘটনায় একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা আমরা চেয়ে আসছি শুরু থেকেই। তারা যেসব মারণাস্ত্র ব্যবহার করে, সেগুলো বিশেষ বিশেষ জায়গায় ও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেই নিশ্চয়তাও তাদেরই দিতে হবে।
সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এমএসএফের নির্বাহী প্রধান অ্যাডভোকেট মো. সাইদুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে এমএসএফ সমন্বয়কারী মোহাম্মদ টিপু সুলতান ও অন্যান্য কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এমএসএফ মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন সুলতানা কামাল