Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভ্যাকসিনে ইউটার্ন, ৭ মার্চ পালন ও শিশু মুক্তিযোদ্ধা তত্ত্বের বছর

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৩৯

ঢাকা: নানা ঘটনাপ্রবহের মধ্য দিয়ে আরেকটি বছর পার করল দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি বিদায়ী বছরেও রাজপথে আন্দোলন জমাতে পারেনি। বরং কিছু কিছু জায়গায় তাদেরকে ইউটার্ন নিতে দেখা গেছে। দুয়েকটি জায়গায় তারা ফিরেছে ‘মূল’র দিকে। আর বছরের শেষে এসে ৫৪ বছর বয়সী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ এবং চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ দাবির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে এক নতুন তত্ব্বের উদ্ভাবন করেছে অস্তিত্ব সংকটে থাকা বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন এবং শেষের দিকে এসে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে মাঠে ফেরার চেষ্টা করেছে বিএনপি। আর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রভাবশালী নেতা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে দলীয় পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দলটি।

ভ্যাকসিনে ইউটার্ন

বিদায়ী বছরের ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতের নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এর পর ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সব শ্রেণিপেশার মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম।

অন্য আর দশটি ইস্যুর মতো সরকারের ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম নিয়েও তুমুল বিরোধিতা এবং নেতিবাচক ভাষণ-বক্তৃতা অব্যাহত রাখে বিএনপি। ভ্যাকসিনেশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা নেতিবাচক খবর ও গুজবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতারা ঘোষণা দেন— কোনো অবস্থাতেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করাবেন না।

বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরুর এক দিন আগে ২৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভারত নিজে তাদের দেশের লোককে এই ভ্যাকসিন দিচ্ছে না। মার্চ মাসে ট্রায়াল করবে। আমরা কি তেলাপোকা, আমরা কি ব্যাঙ, আমরা কি গিনিপিগ? এখন ভারতের ভ্যাকসিন বাংলাদেশের মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োগ করে ওরা দেখবে যে এরা বাঁচে না মরে, এরা অসুস্থ হচ্ছে না সুস্থ হচ্ছে? সেটা দেখে তারপর নিশ্চিত হবে। কত বড় নিষ্ঠুর তামাশা, কত বড় রসিকতা! যে দেশ নিজের দেশের ওপর এটা প্রয়োগ করেনি, মার্চ মাসে ট্রায়াল করবে; অথচ আমাদের দিচ্ছে ট্রায়াল করার জন্য।’

বিজ্ঞাপন

৩০ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার পর মানুষ বাঁচে, না মরে- তা দেখার জন্য ভারতের এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে।’

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের এমন নেতিবাচক বক্তব্যের মধ্যেই ২ মার্চ সপরিবারে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিন নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা এই ভ্যাকসিন শরীরে প্রবেশ করান।

এরপর ১৯ জুন রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি মার্ডানার ভ্যাকসিন নেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিন এখন পৃথিবীর সব চেয়ে কাঙ্ক্ষিত ভ্যাকসিন। সেটি না থাকায় ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মর্ডানার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।’

এরপর ২৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে গিয়ে নিজেই মর্ডানার ভ্যাকসিন নেন রুহুল কবির রিজভী। অর্থাৎ প্রথমে তুমুল বিরোধিতা করলেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রাজেনকার ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাকসিন বিএনপি নেতারা গ্রহণ করেন এবং আগের দেওয়া বক্তব্য থেকে তারা সরে আসেন।

৭ মার্চ পালন

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃসংশভাবে হত্যার পর তৈরি হওয়া প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগিয়ে জন্ম নেওয়া বিএনপি কোনোদিনই বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক ‘৭ মার্চের ভাষণে’র দিনটিকে পালন করেনি। বরং ১৫ আগস্ট ঘটা করে দলীয় চেয়াপারসনের ‘বিতর্কিত’ জন্মদিন পালন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাট এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দলটি। এ ক্ষেত্রে বিদায়ী বছরটি ছিল বিএনপির জন্য এক অনন্য নজির স্থাপনের বছর। বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি ৭ মার্চ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা আয়োজন করে। সেখানে দলটির শীর্ষ নেতারা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই ভাষণ গোটা জাতিকে উদ্ভুদ্ধ করেছিল।’

দলের মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দলের অনেকেই— কেউ নাম দিয়ে, কেউ নাম না দিয়ে স্যোসাল মিডিয়াতে এই সুবর্ণজয়ন্তী পালনের যৌক্তিকতা, বিশেষ করে ৭ মার্চ পালন করা উচিত কি উচিত না, সে ব্যাপারে অনেক কথা লিখেছেন। কেউ কেউ নেগেটিভ কথাও লিখেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই— ৫০ বছর আগে যা ঘটেছিল, তার প্রকৃত ইতিহাস জানার অধিকার আজকের প্রজন্মের রয়েছে। আজকের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে সত্যকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে একটা দলীয় ধারণা এই জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সেইখানে একটা অবস্থান নিতে চেয়েছি।

শুধু ৭ মার্চ পালন নয়, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে বাংলাদেশের ‘আত্মা’ বা ‘মূল’-এ ফেরার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে বিএনপির অনেক নেতার মধ্যে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সভা-সেমিনারে প্রকাশ্যেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে ‘বাংলাদেশের স্থপতি’, ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দগুলো উচ্চারণ করেছেন তারা, যা আগে কখনো দেখা য়ায় নি।

গত ১৮ ডিসেম্বর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আজ এই মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর সময় আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি।’

শিশু মুক্তিযোদ্ধা তত্ত্বের উদ্ভাবন

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১৭ জুন খালেদা জিয়াকে যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা আটক করে, তখন তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বয়স ছিল ৩ বছর ৬ মাস ২৭ দিন। বিজয়ের ৫০ বছর পর এসে সেদিনের সেই সাড়ে তিন বছরের শিশু তারেক রহমানকে ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে দাবি করেছে বিএনপি। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরজুড়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও আলোচনা সভায় দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জোরের সঙ্গে শিশু মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে দলটি। সাড়ে তিন বছরের শিশু কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয় সেই ব্যাখায় না গিয়ে দলটি বলার চেষ্টা করে— যেহেতু খালেদা জিয়া তার দুই শিশু সন্তানসহ আটক হয়েছিলেন, সেহেতু তারাও মুক্তিযোদ্ধা এবং শিশু মুক্তিযোদ্ধা।

গত ১১ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমবারের মতো বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনি শিশু মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও তখন মায়ের সঙ্গে কারাগারে ছিলেন।’

বিদায়ী বছরে শুধু শিশু মুক্তিযোদ্ধা তত্ত্বের উদ্ভাবন নয়, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ দাবি করে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক আমদানি করে বিএনপি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর মাস ডিসেম্বরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে প্রথম নারী মক্তিযোদ্ধা দাবি করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার দাবি— ‘দুই শিশু পুত্রের হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন খালেদ জিয়া।’

১৯ ডিসেম্বর আয়োজিত বিজয় র‌্যালিতেও বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আজ আমাদের এই শপথ নিতে হবে— গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন ‘প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা’ খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করব এবং লন্ডনে নির্বাসিত আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আমাদের পরিচালনার ভার তার ওপর ন্যাস্ত করব।”

বছরজুড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন

বিদায়ী বছরের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু করে বিএনপি। এ লক্ষ্যে জাতীয় কমিটি ও স্টিয়ারিং কমিটি ছাড়াও আইনের শাসন ও মানবাধিকার কমিটি (আহ্বায়ক প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন), মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা কমিটি (আহ্বায়ক মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, সদস্য সচিব কর্নেল (অব.) জয়নুল আবেদীন), প্রচার কমিটি (আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী), সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম কমিটি (আহ্বায়ক ড. আব্দুল মঈন খান, সদস্য সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ), প্রকাশনা কমিটি (আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল নোমান, সদস্য সচিব হাবিবুল ইসলাম হাবিব), স্মরণিকা কমিটি (আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব আব্দুস সালাম), স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটি (আহ্বায়ক সেলিমা রহমান, সদস্য সচিব আবদুল হাই শিকদার), মিডিয়া কমিটি (আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সদস্য সচিব শামা ওবায়েদ), সাংস্কৃতিক কমিটি (আহ্বায়ক গাজী মাজহারুল আনোয়ার, সদস্য সচিব আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল), রচনা প্রতিযোগিতা কমিটি (আহ্বায়ক অধ্যাপক মুস্তাহিদুর রহমান, সদস্য সচিব অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম), র‌্যালি কমিটি আহ্বায়ক মো. বরকত উল্লাহ বুলু, সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল), সাজসজ্জা, মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা ও চিত্র প্রদর্শনী কমিটি (আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স), ক্রীড়া উপকমিটি (আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ লতিফ খান, সদস্য সচিব আমিনুল হক), স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সচিবালয় (আহ্বায়ক বিজন কান্তি সরকার, সদস্য সচিব মো. রিয়াজ উদ্দীন নসু), চিকিৎসা ও সেবা কমিটি (আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সদস্য সচিব ডা. হারুন-অর-রশিদ)সহ মোট ১৫টি বিষয়ভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়।

এছাড়া ঢাকা (আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব ফজলুল হক মিলন), চট্টগ্রাম (আহ্বায়ক আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সদস্য সচিব মাহবুবে রহমান শামীম), রাজশাহী (আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিনু, সদস্য সচিব রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু), খুলনা (আহ্বায়ক নিতাই রায় চৌধুরী, সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মঞ্জু), বরিশাল (আহ্বায়ক সেলিমা রহমান, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার), ময়মনসিংহ (আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান, সদস্য সচিব মো. শরীফুল আলম), ফরিদপুর (আহ্বায়ক প্রয়াত মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, সদস্য সচিব সেলিমুজ্জামান সেলিম), সিলেট (আহ্বায়ক আরিফুল হক চৌধুরী, সদস্য সচিব ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন), কুমিল্লা (আহ্বায়ক মনিরুল হক চৌধুরী, সদস্য সচিব মো. মোস্তাক মিয়া) ও রংপুর (আহ্বায়ক ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমির উদ্দিন সরকার, সদস্য সচিব আসাদুল হাবিব দুলু)সহ মোট ১০টি বিভাগীয় কমিটি গঠন করে বিএনপি।

এই ২৫টি কমিটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ‍উদযাপন উপলক্ষে সারাবছর বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করে। অবশ্য করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিলের পর সব কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি। প্রকোপ কমে আসলে ফের কর্মসূচি শুরু করে তারা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির লোগোর নিচে বিএনপি লিখেছিল ‘২৬ মার্চ, ১৯৭১ যেখান থেকে শুরু’।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় বছর কেটেছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়

গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া গত ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভাকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে। প্রথমে কেবিনে রাখা হলেও এখন তিনি সিসিইউতে। এর আগে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ বছর এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত টানা ৫৪ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজা’য় ছিলেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকার সেই আবেদন আমলে নেয়নি। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হলো— সাময়িক মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাকে দেশে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে। বিদেশে যেতে হলে কারাগারে ফিরে আবেদন করতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ২০ নভেম্বর থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। প্রথমে ঢাকায় গণঅনশন, বিক্ষোভ সভা, মানবন্ধন, জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। বছরের শেষ ৯ দিন ৩২টি জেলায় জনসভা করেছে বিএনপি।

বিদায়ী বছর যেভাবে শুরু, যেভাবে শেষ

বিদায়ী বছরটি বিএনপি শুরু করেছিল জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে। ছাত্রদলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি সকাল ১১টায় চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে ফুল দিতে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি বলেন, ‘জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বৃহত্তর ঐক্য তৈরি করে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারকে পরাজিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি এবং ২০২১ সালে আমরা সফল হব বলে বিশ্বাস করি।’

৩১ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ‍তৃতীয় বার্ষিকীতে ‘ভোটাধিকার হরণের কালো দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিএনপির ২০২১। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এ সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অনেক উন্নয়ন করার দাবি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা করলেও রাজনৈতিক স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিএনপি সালতামামি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর