Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছরজুড়ে জলে স্থলে চীন-মার্কিন বৈরিতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১ জানুয়ারি ২০২২ ০০:০৩

আগের বছরের করোনার জের তো ছিলই; তার ওপর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সঙ্গেসঙ্গেই তালেবানের পুনরুত্থান থেকে শুরু করে দক্ষিণ চীন সাগরের দেশগুলোকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সংকট, এরকম দৃশ্যমান টানাপোড়েনের সঙ্গে বছরজুড়ে প্রযুক্তি-অর্থনীতি-কূটনীতি চীন-মার্কিন বৈরিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেখানে দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

মার্চে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে প্রথম চীন-মার্কিন উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভানের সঙ্গে বসেন চীনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা ইয়াং জিয়েচি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বৈঠকে দুই পক্ষই পরস্পরকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করেছে।

আলাস্কায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে চীনা কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুরুতর কিছু অভিযোগ আনেন। তার মধ্যে অন্যতম চীনের ওপর আক্রমণ চালাতে অন্য দেশগুলোকে উস্কানি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে চীন যা করছে তার সবই লোকদেখানো।

একইসঙ্গে, শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে চীন যে ব্যবহার করছে, যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় সেরকম বিতর্কিত বিষয়গুলো উত্থাপন করে। বিশেষ করে শিনজিয়াং, হংকং, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা এবং মার্কিন মিত্রদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পায়।

বিজ্ঞাপন

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই অভিযোগ করে বলেন, অন্যদেশকে দমন করতে ওয়াশিংটন তার সামরিক পরাক্রম এবং অর্থনৈতিক শক্তির অপব্যবহার করছে। পাশাপাশি, জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক বাণিজ্যিক লেনদেনে বিঘ্ন তৈরি করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকারের অবস্থা এখন একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের বধ করা হচ্ছে।

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, গোটা বিশ্বের গণমাধ্যমের সামনে চীন-মার্কিন কর্মকর্তারা ঘণ্টাব্যাপী উত্তপ্ত বাদানুবাদ চালান। সেই শুরু, তারপর বছরজুড়েই দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। বিবিসির সংবাদদাতা ওই ঘটনাকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে উল্লেখ করেছিলেন।

এপ্রিলে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে চীনের সঙ্গে করা বেল্ট অ্যান্ড রোড চুক্তি বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া। এমন সিদ্ধান্তে বড় ধাক্কা খায় শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প। অস্ট্রেলিয়া শুধু চীনের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেই ক্ষান্ত থাকেনি, আরও এক ধাপ এগিয়ে, দীর্ঘদিনের ভারসাম্য রক্ষা নীতি বিসর্জন দিয়ে সরাসরি চীনবিরোধী জোটে যোগ দেয়। তাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন। তবুও চীনের বিরুদ্ধে একের পর এক মার্কিন পদক্ষেপে সরাসরি সমর্থন এবং যুক্ত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।

জো বাইডেনের উদ্যোগে চীনবিরোধী চার দেশের জোট কোয়াড নতুন করে আত্মপ্রকাশ করে। এ জোটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া বেইজিংবিরোধী তৎপরতায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইনের সঙ্গে শুধু সম্পর্ক ঝালাই করে নিয়েছেন বাইডেন। শুধু তাই নয়, চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব রয়েছে বা সীমান্ত ইস্যুতে বিবাদ রয়েছে এমন কয়েকটি দেশকেও ঘনিষ্ঠভাবে নিজের দলে টেনেছেন তিনি। এসব দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি দেশ ভিয়েতনাম ও ভারত।

দক্ষিণ চীন সাগরের পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে থাকে চীন। এমন দাবি ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, তাইওয়ান, ফিলিপাইনের মতো বছরজুড়ে প্রতিবেশীদের বিরক্ত করেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান কিন গ্যাং। দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলেন, চীন-মার্কিন সম্পর্কের দুয়ার খোলাই রয়েছে, তা বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আগস্টে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই সেখানে তালেবানের পুনরুত্থান ঘটে। তার কিছুদিন আগেই, তালেবানের শীর্ষ নেতারা চীনের সঙ্গে সংলাপ করেন। তালেবানের ব্যাপারে বৈশ্বিক আপত্তির মধ্যেও চীন নানান শর্তের বেড়াজালে ওই সশস্ত্র জিহাদিদের ব্যাপারে নিজেদের আস্থার কথা ঘোষণা করে।

সেপ্টেম্বরে তিন বছর কানাডায় গৃহবন্দি থাকা চীনের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা মেং ওয়াংঝুকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনি মার্কিন গ্রেফতারি পরোয়ানায় কানাডায় গৃহবন্দি ছিলেন। একই মাসে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মিলে অস্ট্রেলিয়া একটি বিশেষ কৌশলগত নিরাপত্তা চুক্তির ঘোষণা দেয়। ওই চুক্তির আওতায় তিন দেশ নিজেদের উন্নত প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময় করবে। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য থাকে চীনকে দমন করা। এ সামরিক চুক্তির মাধ্যমে দেশটি প্রথমবারের মতো পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরির সক্ষমতা অর্জন করবে। অকাস (এইউকেইউএস) নামের এ চুক্তির ফলে অস্ট্রেলিয়ার সামরিক বাহিনী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম টেকনোলজির মতো উন্নত প্রযুক্তিও লাভ করবে।

অক্টোবরে দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন ইউএসএস কানেটিকেট আক্রান্ত হয়। সে সময় সাবমেরিনে থাকা ১৫ নাবিক সামান্য আহত হন।

নভেম্বরে চীন-মার্কিন সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি পিংপং ডিপ্লোমেসি’র ৫০ বছর পূর্তি হয়। এ মাসেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন শি জিনপিং। এরপর, স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে চীন-মার্কিন ঐক্যমত তৈরি হয়।

ডিসেম্বরে মানবাধিকার ইস্যুতে চীনের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় শীতকালীন অলিম্পিককে বেছে নেয় বাইডেন প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ইতিমধ্যে বেইজিং অলিম্পিক বয়কটের সিদ্ধান্ত জানায়। পাশাপাশি, অন্যান্য মিত্রদেরও বেইজিং অলিম্পিক বয়কটের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে চীন বলেছে, অলিম্পিক কোনো রাজনীতির মঞ্চ নয়।

বছরের শেষ দিকে তাইওয়ান ইস্যুতে মন্তব্য করায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কঠোর সমালোচনা করে চীন বলেছে, তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন হস্তক্ষেপ অযাচিত।

সারাবাংলা/একেএম

২০২১ চীন-মার্কিন টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর