হেলেনা-পিয়াসা-পরীতে আলোচনা ছিল তুঙ্গে
১ জানুয়ারি ২০২২ ১২:৩৭
ঢাকা: করোনার মহামারি দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারাদেশ স্তব্ধ থাকলেও হেলেনা জাহাঙ্গীর, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চিত্রনায়িকা পরীমনিকে বছরব্যাপী আলোচনা ছিল তুঙ্গে। একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি ঘটনা এসে হাজির হয়েছিল সাধারণ মানুষের সামনে। আর বছরের শেষ প্রান্তে এসে কক্সবাজারে পর্যটককে জিম্মি করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন তোলে।
গত ২৯ জুলাই রাতে গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বিদেশি মদ, হরিণের চামড়া ও বিপুল পরিমাণ বৈদিশিক মুদ্রাসহ আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় ৬টি মামলা করে র্যাব। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলার চার্জশিট হয়ে বিচার কাজ চলছে আদালতে। এ ঘটনায় হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হন বিতর্কিত এই নেত্রী। এখনও তিনি কারাগারে রয়েছেন।
র্যাব জানায়- সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্যের মাধ্যমে আলোচনায় আসা অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদার সঙ্গে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ‘যোগাযোগ ও লেনদেন’ ছিল।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন দাবি করে বলেন, ‘সেফুদা তাকে (হেলেনা জাহাঙ্গীর) নাতনি হিসাবে সম্বোধন করে থাকেন। তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং লেনদেন আছে।’
ফেইসবুক লাইভে বিভিন্ন অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে ২০১৮ সালে আলোচনায় আসেন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বসবাসকারী সেফুদা। ফেইসবুক লাইভে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকার আদালতে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছিল।
গত ১ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর ডিবি উত্তরের একটি দল বারিধারার বাসায় অভিযান চালিয়ে মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে আটক করে। তার বাসা থেকেও মদ, ইয়াবা ও সীসা জব্দ করা ডিবি পুলিশ।
ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের সাবেক স্ত্রী। বছর চারেক আগে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় সাফাতসহ তার বন্ধু-সহযোগীরা গ্রেফতার হলে ওই সময় আলোচনায় এসেছিলেন পিয়াসা।
১ আগস্ট একই রাতে পিয়াসাকে আটকের পর তার সহযোগী মরিয়ম আক্তার মৌ’কে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তার বাসা থেকে বিপুর পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার মহিদুল ইসলাম পরে জানান, মডেল পিয়াসা-মৌ চক্রে একাধিক নারী রয়েছে। যাদের কাজেই হলো সমাজের বিত্তবান লোকদের বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আদায় করা। তাদের চক্রে শতাধিক নারী রয়েছে। ওইসব নারীদের গ্রেফতারে কাজ করে পুলিশ।
অন্যদিকে পরীমনির ঘটনা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের গন্ডিতেও আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। ঢাকা বোট ক্লাবে এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনায় আসেন পরীমনি। পরীমনি অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা বোট ক্লাবে গভীর রাতে বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তার আগে তাকে জোর করে মদ খাইয়ে দেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো বিচার পাননি মর্মে অভিযোগ করেন।
সেই রাতের (৯ জুন) বর্ণনা দিয়ে পরীমনি অভিযোগ করে গত ১৪ জুন বলেন, আমরা রাতে ঘুরতে বের হই। বোন বনি অসুস্থ বোধ করায় তার ওয়াশরুমের প্রয়োজন ছিল। এজন্য জিমিকে গাড়িতে রেখে বনিকে নিয়ে ক্লাবের ভেতরে যান অমিও। এরপর দুজন লোক এসে বলেন, ম্যাডাম বসেন। অমিও বলে, কফি খান। কফি এনে দিলে জিমি এসে তা টেস্ট করে বলেন যে এটা কফি নয় অন্য কিছু। পরে খেতে না চাইলে নাসির উদ্দিন মাহমুদ জোর করে মুখে বোতল ঢুকিয়ে দিয়ে মদ খাওয়ান। এরপর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেন। এক পর্যায়ে ক্লাবের উপরে নিয়ে গিয়ে সেখানে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর সেন্সলেস অবস্থায় তাকে নামানো হয়। ঘটনার পর থানায় যোগাযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। এরপর তিনি ফেসবুকে অভিযোগ করে স্ট্যাটাস দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সাভার থানায় ধর্ষণ নেয় পুলিশ। সেই মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারের সময় উত্তরার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদসহ সহযোগী অমিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ জামিনে কারাগার থেকে মুক্ত হন।
এ ঘটনার পর গত ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা দল। পরে পরীমনিকে আটক করে র্যাব। র্যাব জানায়, পরীমনির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশী মদ, ইয়াবা ও ভয়ঙ্কর মাদক হিমেবে পরিচিত আইসও জব্দ করা হয়। পরীমনির নামে মামলা হয় মাদক আইনে। সেই মামলায় পরীমনি কারাগারে যায়। দেশে ও বিদেশে এ ঘটনায় আলোচনা সমালোচনা শুরু হলে পরীমনি জামিনে বের হয় কারাগার থেকে।
২০২১ সালের শরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপরাধ জগতে নারীদের দৌরাত্ম্য ছিল তুঙ্গে। আলোচনা সমালোচনা ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। এমনকি পরীমনির জামিন শুনানি নিয়ে বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়। এক পর্যায়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আসে জামিন শুনানি বিষয়ে। আর কোনো বছরে এরকম নারী কেন্দ্রিক অপরাধের কোনো আলোচনা-সমালোচনা হয়নি বলে জানা যায়।
সারাবাংলা/ইউজে/একে