Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অটোপাসে বছর শুরু, শেষ পরীক্ষায়

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:২৮

ঢাকা: মহামারির কারণে পৃথিবীর আর সব দেশের মতো বাংলাদেশেও শিক্ষা খাত বেশ বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। করোনা সংক্রমণ কামাতে দেওয়া সতকর্তার জন্য দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রাখতে হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাতিল করতে হয়েছে বেশ কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষাও। যার একটিতে অটোপাশ দিয়ে এবারের শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছিল।

২০২০ সালে যে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছিল। সেটির ফলাফল ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয়। কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই দেশের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো দেওয়া হয় এই অটোপাস। তবে এই ফল তৈরিতে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার গড় করে বোর্ডগুলো। যাতে শতভাগ শিক্ষার্থীকে পাস দেওয়া হয়। জিপিএ-৫-ও দেওয়া আগের বছরের চেয়ে তিনগুণ বেশি।

বিজ্ঞাপন

তবে পরীক্ষা বাতিলের এই ধারা ২০ সালে শুরু হলেও বজায় ছিল এই বছরেও। করোনা পরিস্থিতিকে কারণ দেখিয়ে ২০২১ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা বাতিল করেছে সরকার। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৬ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়েছে অটোপাস দিয়েছে।

কেবল অটোপাসই নয় ঘটনাবহুল এই বছরটিতে ঘটেছে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি, এমপিওভুক্তি সহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন, সমন্বিত ভর্তি, লটারি ভর্তি, সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও শিক্ষার্থী আন্দোলন সহ নানান ঘটনা। এই সময়ে করোনারর কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। ইউনিসেফ ও ইউনেস্কোর যৌথ প্রতিবেদনে শিক্ষা ঘাটতিতে থাকা শিশুদের আলোকপাত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক নিয়োগ পদোন্নতি ও এমপিও নিয়ে নিয়মিতেই আন্দোলন এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি লেগে থাকে শিক্ষাপাড়ায়। তবে গেল ১২ বছরে এবারই নজিরবিহীন বেশি শিক্ষার্থী আন্দোলন দেখেছে বাংলাদেশ। বছরের শুরতেই সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু ও হল খোলার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে অগ্রাধিকার পায় পরীক্ষার দাবিও। কোথাও কোথাও এসব আন্দোলন বেশ সহিংসও হয়ে উঠে। এছাড়াও স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের বিচার, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের হুমকির বিচার, বাসে হাফ ভাড়া চালু, সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী হত্যার বিচারসহ নানান দাবিতে সারা বছরজুড়েই ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।

এ বছর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ, ইবতেদায়ি মাদরাসা ও মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবি, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের বেতনও গ্রেড-৬ করাসহ নানা দাবিতে বছর ধরে আন্দোলন করেছেন শিক্ষকরা।

তবে এই সব আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে প্রথমবারের মতো এবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিতভাবে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া এই বছরেই দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ জুলাই হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শতবর্ষপূর্তির উৎসব উদযাপন করা হয়। এই আয়োজনে দেশ ও বিদেশে নানা স্কলারদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। ছিল কয়েকটি কনসার্টের আয়োজনও। এ ছাড়াও এবারই প্রথম ঢাকা শহরের বাইরে সাতটি বিভাগীয় শহরে ভর্তিপরীক্ষা আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদেরকে ভর্তি পরীক্ষার সময়ে নির্ভার রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ভর্তিতে যে কোনো ধরনের তদবির বন্ধ করতে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত গেল বছর থেকে। তবে এর আগে এটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে সীমাবদ্ধ রাখা হলেও এবার এটি বেসরকারিতে কার্যকর করা হয়েছে। আগামীবছর এটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

এ বছর মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষাতে বেশ পরিবর্তন এনেছে সরকার। এ জন্য কারিকুলামও সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে পরিমার্জিত কারিকুলাম অনুযায়ী, শুধু দশম শ্রেণির কারিকুলামেই এই পরীক্ষা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। নবম-দশম শ্রেণিতে একমুখী শিক্ষা দেওয়া হবে, বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্যের মতো বিভাজন থাকবে না। এই শিক্ষাক্রমটি পুরোপুরি ভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন হবে।

এ বছর করোনার কারণে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। লকডাউনের কারণে চাকরীপ্রার্থীরা কমপক্ষে দুইবছর পিছিয়ে গেছে। একারণে আন্দোলনকারীরা বলছেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা এখন সময়ের দাবি।

এ বছর আরও আলোচিত ছিল ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের অশালীন গালাগালপূর্ণ একটি ফোনালাপ। পরে বিষয়টি তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও এই তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কামরুন নাহারও রয়েছেন স্বপদে বহাল।

কামরুন নাহার ছাড়াও এবছর আরও অনেক শিক্ষক স্বীয়কর্মের জন্য বিতর্কিত হয়েছেন। অনেক শিক্ষক হয়েছেন মামলার আসামি। তবে এর মধ্যে খুশীর খবরও পেয়েছে শিক্ষকরা। এবছরই প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। যা প্রাথমিক শিক্ষার পরিবেশে দারুণ স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।

এ ছাড়াও এছরেরও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে ছিল প্রাথমিকের উপবৃত্তি পেতে জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রভাষকদের পদোন্নতি, এমপিওভুক্ত শিক্ষক নিয়োগে বৃহৎ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, এমপিও নীতিমালা-২০২১ জারি, মাধ্যমিকে প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতায় পরিবর্তন, ইবতেদায়ি প্রধানদের ১১তম গ্রেড, কওমি মাদ্রাসায় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং আট মাস অপেক্ষা করে বছরের শেষে এসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন পারা।

সারাবাংলা/টিএস/একে

অটোপাস পরীক্ষা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর