নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মাঠে ছিল না পুলিশ, ফানুসের আগুনে পুড়ল ঘরবাড়ি
১ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৫১
ঢাকা: থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে ফানুসের আগুনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, রাজধানীতে অন্তত ৭টি স্থানে আগুন ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। আর রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩৩টির মতো অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তবে আগুনে কেউ হতাহত হননি।
পুলিশের নির্দেশনা ছিল— থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকা ফোটানো ও ফানুসের মতো কোনো কিছু ব্যবহার করা যাবে না। একইসঙ্গে উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজন করা যাবে না।
রাজধানীতে এলাকাভিত্তিক কোথাও কোথাও প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। এরপরও থার্টি ফার্স্ট নাইটে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আতশবাজি, পটকা ফোটানো আর ফানুস উড়ানো হলো।
সাধারণ মানুষের দাবি— নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশ মাঠে ছিল না যার কারনে ভয়াবহ আকারে বেশি বেশি ফানুস উড়ানো হয়েছে। ফলে আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১ জানুয়ারি) ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার রোজিনা ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গতকাল ৩১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীতে রেকর্ড সংখ্যক আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো হয়েছে। ফানুসের আগুনে রাজধানীর ৭টি স্থানে আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে দুইটি স্থানে ছিল বড় আগুন। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট গিয়ে আগুন নিভিয়েছে। বাকিগুলোতে ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগেই আগুন নিভে গেছে।
রাজধানীর ঢাকার মিরপুর, খিলগাঁও, ডেমরা, সূত্রাপুর, লালবাগ, কলাবাগান, রায়েরবাগ ও কেরানীগঞ্জে পৃথক পৃথক ৭টি স্থানে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে রায়েরবাগ ও কলাবাগের আগুন ছিল ভয়াবাহ আকারে। এ সব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। সবগুলোই ফানুসের আগুন থেকে আগুন লেগেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে— রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে অন্তত ৩৩টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ফানুস উড়ে এসে কোথাও বাড়িতে পড়েছে, কোথাও খড়ের গাদায় পড়েছে, কোথাও বিদ্যুতের তারের ওপর পড়েছে আবার কোথাও দাহ্য বস্তুর ওপর পড়েছে। ওইসব ঘটনাতেও তেমন কেউ হতাহত হয়নি। সারাদেশের আগুনের ঘটনাগুলোও ফানুসের আগুন থেকে সংঘটিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
পুলিশ প্রতিবারই থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কম বেশি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিবারই আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে কখনও এরকম আগুন লাগার ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগলেও ছোটখাটো আগুন লাগে যা এমনিতেই নিভে যায়।
এবার কেন এত আগুনের ঘটনা ঘটলো জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক (ঢাকা মেট্টো) দেবাশীষ বর্ধণ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে আগুনের সংবাদ পেয়েছিলাম তবে এবার আগুন লাগার ঘটনা ছিল অনেক বেশি। ঢাকায় ৭টি ও সারাদেশে ৩৩টিসহ মোট ৪০টি আগুনের ঘটনা ঘটে।’
তিনি বলেন, ‘এবারে ফানুস উড়ানো ছিল অনেক বেশি। ফানুসের আগুন সহজে নেভে না। এ আগুন বাতাসের কারণে উড়ে গিয়ে কোথায় পড়বে তা জানা যায় না। এটি ভয়াবহ একটি ব্যাপার। বিদ্যুতের তারে পড়বে নাকি কোনো দাহ্য বস্তুর ওপর পড়বে তাও জানা যায় না। এর ফলে গতরাতে অনেকগুলো আগুনের ঘটনা ঘটেছে।’
দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ‘ফানুস নিষিদ্ধ করা দরকার। একেবারই নিষিদ্ধ করা দরকার। নিষিদ্ধ করার পর কেউ যেন তা আর উড়াতে না পারে সে জন্য পুলিশকে আরও কঠোর হওয়া দরকার। কারণ পুলিশ একমাত্র এটি বন্ধ করতে পারে।’
জানতে চাইলে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস উড়ানো ও আতশবাজিতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এরপরেও ঢাকার কোথাও কোথাও আতশবাজি হয়েছে, ফানুসও উড়ানো হয়েছে। পুলিশ সড়কে বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সরব ছিল। আইন শৃঙ্খলার রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিল। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাবাসীর অনেকে আতশবাজি ফুটিয়েছে বাসার ছাদে। ফানুসও উড়িয়েছে ছাদ থেকে। যেখানে পুলিশের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেক বাসার ছাদে পুলিশ যেতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফোটানো বন্ধ করতে হলে সবার আগে জনসচেতনতা দরকার।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষার হার বেড়েছে। সবার মাথাপিছু আয়ও বাড়ছে। মানুষ বুদ্ধি খাটাচ্ছে ওই আয় দিয়ে বড় কিছু করার। কিন্তু সচেতনতার জায়গাগুলোতে কেন জানি তারা উদাসীন। পুলিশ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেটি মেনে নিয়েই নাগরিকদের কর্তব্য পালন করা উচিত। সবাই সবার জায়গা থেকে সচেতন জলে এ সব ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।’
আরও পড়ুন
বড়দিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটে ডিজে পার্টি নিষিদ্ধ
‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নিয়ে উশৃংখলতা নয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বড়দিন এবং থার্টি ফার্স্টনাইট সীমিত আকারে পালনের নির্দেশ
সারাবাংলা/ইউজে/একে
খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ডিএমপি থার্টি ফাস্ট নাইট পুলিশ ফানুস ওড়ানো ফানুসের আগুন