‘মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও মুশতারী শফী যুদ্ধ করে গেছেন আমৃত্যু’
১ জানুয়ারি ২০২২ ২১:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উদ্যোগে চট্টগ্রামে সদ্যপ্রয়াত শহিদজায়া বেগম মুশতারী শফীর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সিপিবি নেতারা বলেছেন, নয় মাসে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও স্বামী-ভাই হারানো বেগম মুশতারী শফীর যুদ্ধ কখনও শেষ হয়নি। আমৃত্যু তিনি যুদ্ধ করে গেছেন।
শনিবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর হাজারী লেইনে দলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন গণজাগরণ মঞ্চের সদস্য সচিব ও উদীচী চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ। জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য দেন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার, শহিদজায়ার সন্তান মেহরাজ তাহসান শফী, জেলা সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, উদীচী চট্টগ্রামের সহ সাধারণ সম্পাদক জয় সেন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী এবং নারীনেত্রী অথৈ নাসরিন।
সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টিকে বারবার নিষিদ্ধ করা হয়। তখন বেগম মুশতারী শফীর বাসা ছিল নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীদের আশ্রয়স্থল। একাত্তরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর দুই ট্রাক অস্ত্র ও গোলাবারুদ মুশতারী শফীর স্বামী ডাক্তার শফী উনার বাসায় নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন। এই অপরাধে উনাকে পাকিস্তানি বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুশতারী শফীর ভাইও শহিদ হয়েছিলেন। স্বামী এবং ভাইকে হারানোর পরও এই মহীয়সী নারী দমে যাননি। তাকে দমানো যায়নি। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, আমাদের যুদ্ধ নয় মাসে শেষ হয়েছিল। কিন্তু বেগম মুশতারী শফী আমৃত্যু যুদ্ধ করে গেছেন।’
উদীচী চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চন্দন দাশ বলেন, ‘বেগম মুশতারী শফীর স্বামী-ভাইকে খুন করেও তাকে দমানো যায়নি। তিনি নিজেও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন দেশে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূলের আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। রাজাকার-আলবদরদের বিচারের দাবিতে জনমত গড়ে তুলেছেন। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আদর্শ আর সংগ্রাম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি।’
অশোক সাহা বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, বেগম মুশতারী শফী তাদের বিরুদ্ধে সবসময় লড়াই-সংগ্রামের ময়দানে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে তিনি আপসহীন ছিলেন আমৃত্যু। তিনি আজীবন সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদি শক্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক, নাগরিক ইস্যুতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, নারীদের অধিকার আদায়ে তিনি সবসময় রাজপথে সোচ্চার থেকেছেন। মুশতারী শফীর আদর্শ ও দৃঢ়তা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা।’
স্মরণসভার শুরুতে প্রয়াত শহিদজায়া বেগম মুশতারী শফীর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শোক সংগীত পরিবেশন করেন উদীচী চট্টগ্রামের শিল্পীরা।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম