বছরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনায় ব্যাংকিং খাত
১ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৪৮
ঢাকা: চলতি ২০২১ সালের বছরজুড়ে নানা কারণে ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন ঘটনা আলোচনা-সমোলোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমডি-চেয়ারম্যান সরিয়ে দেওয়া, অর্থপাচার ও ব্যাংকগুলোর প্রণোদনার অর্থছাড়ে গড়িমসি ছিল বছরজুড়ে আলোচনায়। এ ছাড়াও রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও করোনাকালে কর্মী ছাটাই নিয়ে বছরজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়ে ব্যাংক খাত। অন্যদিকে নায়িকা পরীমনিকে ব্যাংকারের গাড়ি উপহার দেওয়ার আলোচনা ছিল চোখে পড়ার মতো ঘটনা।
বছরের শেষ দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ব্যাংকপাড়ায় রীতিমতো ঝড় উঠে। অন্যদিকে অনেক শাখা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের বাইরে থাকলেও বিদায়ী বছর শতভাগ অনলাইনের আওতায় আনা হয়। এ ছাড়াও গ্রাহকদের সেবা দিতে বেশকিছু ব্যাংক নিয়ে এসেছে আধুনিক সেবা সংবলিত নতুন ডেবিট কার্ড। তবে নতুন বছরে ব্যাংক খাতকে চাঙা করতে বেশকিছু পরামর্শ রয়েছে বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, ব্যাংকখাতের অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে ঋণ আদায় বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া।
বিদায়ী বছরে ব্যাংক খাতে আলোচিত যত ঘটনা—
খেলাপি ঋণ
চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেষে ব্যাংকখাতের মোট ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। এসময় রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মোট ঋণ বিতরণ করে দুই লাখ ১৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকগুলো নয় লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে দুই হাজার ৬৯২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
তবে করোনা শুরুর বছর ২০২০-এর ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। হিসাবমতে, চলতি বছরের তিন প্রান্তিকে (প্রথম ৯ মাস) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
বাড়ছে না ঋণ আদায়
কতিপয় ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করতে নানান ফন্দি করেন। এর মধ্যে করোনাভাইরাস শুরুর পর ঋণগ্রহীতাদের গণছাড় দেওয়া হয়। সেই সুযোগে ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধ না করার নতুন একটি পক্ষ তৈরি হয়। সামর্থ্য থাকলেও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে অনীহা দেখা দেয়। তাদের অনেকেই আবার রপ্তানি বিলের অর্থ দেশে আনলেও পুরো পাওনা পরিশোধ না করে ছাড়ের সুযোগ নিচ্ছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে তাদের খেলাপি করা যাচ্ছে না। নতুন ঋণসহ ব্যাংকিং সুবিধাও দিতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকের আয় ও নগদ অর্থের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। চলতি বছর তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ৯ মাসে ব্যাংকগুলো নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) থেকে মাত্র চার হাজার ১৯৫ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে, যা করোনা শুরুর বছর ২০২০ সালের চেয়ে কম। ২০২০ সালে ঋণ আদায় হয়েছিল পাঁচ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে খেলাপি থেকে আদায় হয়েছিল ১৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।
প্রণোদনা ঋণ
প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বিতরণ করা ঋণ আদায় নিয়ে চিন্তিত ব্যাংকখাত। ব্যাংকগুলো নতুন করে ঋণ দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। ব্যবসা খারাপ হওয়ার কারণে অনেক গ্রাহক অর্থ ফেরত দিতে পারছেন না। ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের সার্বিক আদায়ে। তাই নতুন করে ঋণ দিতে সাহস পাচ্ছে না অনেক ব্যাংক। কোভিড-১৯ সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্বিতীয় ধাপে প্রণোদনার ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় মেয়াদের ঋণ বিতরণ শুরু হলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রথম মেয়াদে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ প্রায় ৮০ শতাংশ বাস্তবায়নে সক্ষম হয় ব্যাংকখাত। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তথ্য বলছে, তিন মাস পার হলেও দ্বিতীয় মেয়াদে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের হার ১ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে।
প্রবাসী আয়ে ভাটা
করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সঙ্গে প্রবাসী আয়ের গতিও ধীর হয়ে পড়ছে। কয়েক মাস ধরে টানা কমছে অর্থনীতির অন্যতম সূচকটি। সর্বশেষ নভেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং আগের মাসের চেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৮৯ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ২২৮ কোটি ৫২ লাখ ডলার বা ২১ শতাংশ। করোনা পরিস্থিতির পর হুন্ডি প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে কমেছে প্রবাসী আয় এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ইডি শাহ আলমের অনিয়ম
নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম চাপা দিতে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগে বর্তমান নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শাহ আলমের অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শাহ আলম এতদিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে তার সে দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শাহ আলমকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সরিয়ে দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে তাকে স্থানান্তর করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি
সম্প্রতি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের নানান অভিযোগ ওঠে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অক্টোবরে এ কমিটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিআইএফসির মাধ্যমে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ কেলেঙ্কারি হয়েছে ধারণা করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতি শনাক্ত করতে গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং (কারণ উদ্ঘাটন) কমিটি। পরিচালকরা তাদের নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে এই অর্থ ঋণের নামে হাতিয়ে নেয় বলে উল্লেখ করা হয়।
সর্বনিম্ন বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আমদানি-রফতানি বাড়ছে সমানতালে। সবকিছু আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করায় অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোর মতো বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। গত কয়েক মাস ধীরগতিতে বাড়লেও অক্টোবরে সেপ্টেম্বরের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি।
সেপ্টেম্বরে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল, সেখানে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। অক্টোবর শেষে উদ্যোক্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যের চেয়ে এখনো ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ পয়েন্ট কম ঋণ নিয়েছেন। মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
আলোচনায় ন্যাশনাল ব্যাংক
সিকদার গ্রুপ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদার মারা যান চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি। তার শেষকৃত্যে অংশ নিতে দেশে ফেরেন ছেলে। পলাতক থাকার পর ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছার পরপরই গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদার। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের ৪৪৩তম বোর্ডসভায় প্রয়াত জয়নুল হক সিকদারের স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার তিন বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।
২৫ নভেম্বর সিকদার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ সৈয়দ আবদুল বারী পদত্যাগ করেন। ব্যাংকের পরিচালক রন হক সিকদারের সঙ্গে বিরোধের জেরে আবদুল বারী এমডি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান সৈয়দ রইস উদ্দিন। ৩০ নভেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় মেহমুদ হোসেন এমডি পদে নিয়োগ পান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর তিনি যোগদান করেন।
ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাই
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বেসরকারি খাতের ছয়টি ব্যাংকে পরিদর্শন কার্যক্রম চালিয়েছে। পরিদর্শনে উঠে আসে, ‘২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের (২০২১ সাল) আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তিন হাজার ৩১৩ কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়েছেন। এর মধ্যে বয়স থাকার পরও স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো হয়েছে তিন হাজার ৭০ জনকে। তাছাড়া অপসারণ করা হয়েছে ২০১ জনকে, বরখাস্ত করা হয়েছে ৩০ কর্মকর্তাকে এবং ছাঁটাই করা হয়েছে ১২ কর্মকর্তা। তবে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ দেখানো বেশিরভাগ কর্মকর্তার পদত্যাগের জন্য একটি সময় বেঁধে দিয়েছিল ব্যাংক। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না বলে মৌখিকভাবে জানানো হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই পদত্যাগে বাধ্য হন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংকপাড়ায় পরীমনির আলোচনা
আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি গ্রেফতার হওয়ার পর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় যে, তাকে একটি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। কথাসাহিত্যিক সিটি ব্যাংকের এমডি মাশরুর আরেফিন এরপর এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, তার সঙ্গে পরীমনির কখনো দেখাও হয়নি। সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগ তুলে তিনি গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং পরে মামলা করেন।
ভল্ট থেকে টাকা উধাও
ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন গুলশান শাখার ভল্ট থেকে ১৯ কোটি টাকা উধাও হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শক দল গত ২০ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির শাখায় গিয়ে এমন তথ্য উদ্ঘাটন করেছে। ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলটি প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শুরুতেই ভল্ট পরিদর্শন করে। এসময় কাগজে-কলমে ৩১ কোটি টাকা দেখানো হলেও শাখার ভল্টে ১২ কোটি টাকা পাওয়া যায়। এ নিয়ে ব্যাংকপাড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
শতভাগ অনলাইন শাখা
দেশে বর্তমানে ব্যাংকের ১০ হাজার ৮০৫টি শাখা অনলাইনের আওতায় এসেছে। বাকি সাতটি শাখাও আংশিক অনলাইন সেবার আওতায়। ফলে পুরোপুরি অফলাইনে নেই ব্যাংকের কোনো শাখা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩০৮টি ব্যাংক শাখা আংশিক অনলাইন থেকে বেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ অনলাইন সেবায় আসে।
আইএমএফের প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা উচ্চ খেলাপি ঋণ। এ কারণে ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। একই সঙ্গে করোনাকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকের ভূমিকা বিষয়েও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
গত ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংক-আইএমএফের পূর্বনির্ধারিত এক বৈঠকে এসব প্রশ্ন তোলে সংস্থাটি। একই সঙ্গে করোনা মহামারিতে ব্যাংকিং সেক্টরের ক্ষতি ও গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ। এ কারণে ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংয়ের পরিবর্তন এসেছে কি না, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে এই সংস্থা।
প্রশ্নফাঁস নিয়ে তুলকালাম
রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ৬ নভেম্বর সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) পদে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এক হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন প্রার্থী। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ব্যাংক কর্মকর্তা ও চাকরিপ্রত্যাশীসহ চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা। পরে আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় অনুষ্ঠিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
বিদায়ী বছরে কেমন ছিল ব্যাংকখাত, তা নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশ্লেষক ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘কোভিড আসায় সব সেক্টরেই এর ইমপ্যাক্ট (প্রভাব) পড়েছে। কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। সবচেয়ে সমস্যার মধ্যে রয়েছে ব্যাংকখাত।’
তিনি বলেন, ‘প্রণোদনা প্যাকেজ বড়দের দেওয়া হলেও ছোটদের ক্ষেত্রে এটা ছিল না। ২৫ শতাংশ পরিশোধের পর কাউকে খেলাপি করা যাবে না, এমন সিদ্ধান্তে খেলাপিরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে। খেলাপি যেভাবে বেড়েছে, সে তুলনায় ঋণ আদায় হয়নি উল্লেখযোগ্য হারে।’
সাবেক এই গভর্নর বলেন, ‘করোনার মধ্যে এত ছাড় দেওয়া হলো, তারপরও খেলাপি ঋণ বাড়লো। আবার কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলেও ওই ঋণকে খেলাপি করা হয়নি। নতুন করে ঋণখেলাপি করা হয়েছে তবুও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তাহলে ঋণ আদায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যাংকাররা ঠিক কী করেন? ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকাররা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না।’
ব্যাংকখাতকে আবারও ভালো অবস্থানে ফেরাতে বেশকিছু পরামর্শ দেন সাবেক এই গভর্নর। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকখাতে কিছু পরিবর্তন আনা দরকার। একই পরিবারে অনেকেই বোর্ড অব ডিরেক্টর হচ্ছে, এটা দেখার বিষয়। ব্যাংকখাতের সঙ্গে যারা অনিয়মে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে ঋণ আদায় বাড়ানোর দিকে আরও নজরদারি বাড়ানো।’
সারাবাংলা/জিএস/একে