Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ে লোকারণ্য, পর্যটনে প্রাণচাঞ্চল্য

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:১১

রাঙ্গামাটি: পুরনো বছরের শেষ দিন ও নতুন বছরে পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যে অবকাশযাপনে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় জমেছে পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটিতে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েই চলেছে এই জেলায়। খ্রিস্টীয় বর্ষের শেষ দিন ও নতুন বছরের শুরুতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে স্থানীয় পর্যটনখাতে।

শনিবার (১ জানুয়ারি) জেলা শহরে অবস্থিত ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি‘ খ্যাত ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, রাঙ্গামাটি পার্ক, আরণ্যক, আসামবস্তি, বার্গী লেকভ্যালিসহ বিভিন্ন পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ নীলজলে নৌ-ভ্রমণে দেখা গেছে অনেককে। আবার কেউ-কেউ ঐতিহ্যবাহী সুবলং ঝরনায় পানি না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন। তবে করোনার এই উদ্ভূত সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মানাতে পর্যটক এবং খাতসংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে জেলা শহরে পর্যটকদের উপস্থিতিতে স্থানীয় হোটেল-মোটেল ব্যবসা, টেক্সটাইল পণ্যসহ পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টদের ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। পর্যটন ঝুলন্ত সেতু এলাকার ভাসমান মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা জানান, রাঙ্গামাটিতে আসা পর্যটকদের এখানকার স্থানীয় আনারসের প্রতি আগ্রহ রয়েছে। পর্যটকে লোকারণ্য হওয়ায় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি ফিরেছে। এমনটা চললে তারা অর্থনৈতিকভাবে আরও লাভবান হবেন।

রাঙ্গামাটি জেলা শহরের তবলছড়ি এলাকায় অবস্থিত টেক্সটাইল মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানেও বিকেলের দিকে পর্যটকদের উপস্থিতি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকরা স্থানীয়ভাবে তৈরি, পাহাড়িদের ঐহিত্যবাহী পোশাক থামি-পিনন, গামছা, শীতের চাঁদরসহ বিভিন্ন বার্মিজ পণ্য ক্রয় করছেন। টেক্সটাইল মার্কেটের কয়েকজন বিক্রেতা জানায়, বছরের সবসময় তাদের বেচাকেনা হয় না। বিশেষত ভ্রমণ মৌসুমে বেচাকেনা বেড়ে যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পর্যটকদের এই সময়ে পাহাড়ি শীতের চাঁদরের প্রতি আগ্রহ বেশি।

বিজ্ঞাপন

রংপুর থেকে আগত পর্যটক আবু সালেহ মো. শিহাব জানান, সাজেক ঘুরে রাঙ্গামাটি শহরে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। সাজেকের ‘কংলাক পাহাড়’ চূড়া ও নয়াভিরাম কাপ্তাই হ্রদ আমাকে যথারীতি মুগ্ধ করেছে। এর আগে কখনো পাহাড়ে আসা হয়নি। প্রথমবারের মতো এখানে এসে পাহাড়ের প্রেমে পড়েছি। সময়স্বল্পতার কারণে বান্দরবানে যেতে পারিনি। তবে আগামীতে পাহাড়ের তিন জেলায় সময় নিয়ে বেড়ানোর জন্য আবার আসবো। চট্টগ্রাম থেকে আগত দীপংকর সাহা বলেন, রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন সময়ে নানান কাজেই আসা হয়েছে। এখানকার সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের মন কাড়বেই।

ঢাকা থেকে আগত রিমি-সালেহ দম্পতি জানান, পর্যটন ঝুলন্ত সেতুতে আসার অধীর আগ্রহ দীর্ঘদিনের। নতুন বিয়ে করেছি, তাই নতুন মানুষকে সঙ্গে করে এখানেই প্রথম এলাম। তবে পর্যটন ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক ও কাপ্তাই হ্রদ- সবকিছুরই সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। পর্যটন ঝুলন্ত সেতু এলাকার ভেতরে কোনো পাবলিক টয়লেট নেই; এই বিষয়টি আমাদের যথারীতি বাজে লেগেছে। এতো নাম-ডাকের একটি স্থানে এমন উদাসীনতা কারোই ভালো লাগার মতো নয়।

রাঙ্গামাটি পর্যটন বোটঘাটের ব্যবস্থাপক রমজান আলী বলেন, থার্টি ফাস্ট নাইট ও নতুন বছরের আগমনকে সামনে রেখে রাঙ্গামাটিতে বিপুল পরিমাণ পর্যটক এসেছেন। প্রতি বছরই শীতকালীন এ সময়টাতে পাহাড়ে পর্যটকদের সমাগম বেড়ে যায়; এবারও তেমনটাই হয়েছে। গত কয়েকদিনে আমাদের ট্যুরিস্টবোট চালকরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পর্যটকরা কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন প্রান্তে ট্যুরিস্টবোটে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় আগের চেয়ে ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া কিছুটা বেড়েছে।

পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স রাঙ্গামাটির ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়–য়া জানান, বর্তমানে পর্যটক মৌসুম হিসেবে আমরা একটা ভালো সময় পার করছি। আমাদের হোটেল-মোটেল ও ঝুলন্ত সেতুতে বিপুল পরিমাণ পর্যটক এসেছেন। পর্যটকদের সেবায় আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। এদিকে, মেঘের উপত্যকা হিসেবে পরিচিত রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত নয়াভিরাম পর্যটনকেন্দ্র সাজেক ভ্যালিতেও পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়েছে। খ্রিস্টীয় বছরের শেষ সূর্যাস্ত ও প্রথম সূর্যোদয় দেখতে সাজেকে ভিড় জমিয়েছেন পর্যটকরা। রাঙ্গামাটি কটেজ মালিক সমিতির হিসাব বলছে, সাজেকে অবস্থিত শতাধিক কটেজ-রিসোর্ট বর্তমানে প্রায় শতভাগ পরিপূর্ণ হয়েছে।

রাঙ্গামাটি জেলা হোটেল-হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম জানিয়েছেন, গত তিন-চার দিনে পার্বত্য শহর রাঙ্গামাটিতেই অগণিত পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। আমাদের সমিতির তালিকাভুক্ত প্রায় ৪৫ হোটেলে আনুমানিক ১০-১২ হাজার পর্যটক অবকাশযাপন করতে পারেন। এই সময়টাতে প্রায় সবগুলো হোটেলই ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পরিপূর্ণ ছিল। আগামী আরও কয়েকদিন রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের চাপ থাকার আশঙ্কা করছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

সারাবাংলা/এএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর