‘অনিষ্পন্ন মামলা বিচার বিভাগের জন্য সুখকর নয়’
২ জানুয়ারি ২০২২ ২১:০৫
ঢাকা: বিপুল পরিমাণ অনিষ্পন্ন মামলা বিচার বিভাগের জন্য সুখকর নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ। রোববার (২ জানুয়ারি) নিজের প্রথম কর্মদিবসে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় তাকে এই সংবর্ধনা দেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ বলেন, ‘প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশে মাত্র এক হাজার ৯০০ জন বিচারকের কাঁধে যে বিপুল পরিমাণ মামলা অনিষ্পন্ন অবস্হায় রয়েছে, তা বিচার বিভাগের জন্য কোনোভাবেই সুখকর নয়।’
মামলা জট নিরসনের উপর জোর দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার দায়িত্বভার গ্রহণের সূচনালগ্নে সকল স্তরের বিজ্ঞ বিচারকদের আহ্বান জানাব, আসুন কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিকতা ও কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে বিচার প্রার্থীর প্রতি সমবেদনা ও ভালোবাসা দিয়ে অধিক পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হই। এটি হবে বিচার বিভাগের জন্য মামলার জট থেকে মুক্তির যুদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘অধস্তন আদালতে মামলা জট নিরসনে আটটি বিভাগের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন করে বিচারপতিকে প্রধান করে আটটি মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। তিনি প্রতি মাসে প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেবেন। পুরনো মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিষ্পত্তির বিষয়ে তদারক করবেন।
‘যে জাতি তার ৩০ লাখ সন্তানের রক্তের বিনিময়ে এবং কোটি কোটি মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে এবং অসীম সাহসিকতার সাথে জীবনকে বাজি রেখে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে পারে, সে জাতি বিচার বিভাগের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, এটা আমার কখনই বিশ্বাস হয় না’- বলেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ।
তিনি বলেন, ‘আমি উদার চিত্তে বিচার বিভাগকে নিয়ে আইনের কাঠামোর মধ্যে যে কোনো গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। কবিগুরুর ভাষায় বলতে চাই, ‘নিন্দা করতে গেলে বাইরে থেকে করা যায়, কিন্তু বিচার করতে গেলে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়’।
‘আপনারা যারা বিচার বিভাগের আলোচক ও সমালোচক রয়েছেন, তারা বিচার বিভাগের সমস্যা উপলব্ধি করবেন, নিঃসংকোচে আলোচনা বা সমালোচনা করবেন রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকামিতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে’— বলেন প্রধান বিচারপতি।
রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ— আইন সভা, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমন্বিত কাজের ওপর জোর তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের একটি যদি দুর্বল হয়, তাহলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতে পারে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অপর দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সকল বিভাগ ও ব্যক্তিকে অবশ্যই বারবার স্মরণ করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক সভ্যতা পরাজিত হবে।’
রীতি অনুযায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সারাবাংলা/এজেড/এসএসএ