Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিদায়ী বছরে নতুন উচ্চতায় রেমিট্যান্স

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ জানুয়ারি ২০২২ ২২:১৬

ঢাকা: প্রবাসীদের দেশে পাঠানো অর্থ তথা রেমিট্যান্স আরও নতুন এক উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড ২২ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (১ ডলার ৮৫ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রবাসীদের পাঠানো এই রেমিট্যান্স বাংলাদেশের ইতিহাসে যেকোনো অর্থবছর কিংবা পঞ্জিকাবর্ষের চেয়েও বেশি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, এর আগে ২০১৯ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন। এরপর ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার পাঠানোর নতুন রেকর্ড গড়েন প্রবাসীরা। এবারে ভাঙল সেই রেকর্ডও। সদ্য বিদায়ী বছরটিতে আগের বছরের চেয়ে ৩২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

এদিকে, ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় পরের পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছিল। ডিসেম্বরে এসে সেটি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সামনেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে কি না— সেটি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। তারপরও রেমিট্যান্সের প্রবাহকে দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচকই মনে করছেন তারা। এর মধ্যে রেমিট্যান্সে প্রণোদনার হার দুই থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করার জন্যও সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তারা।

আরও পড়ুন-

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গত দুই বছর ধরে কয়েকটি কারণে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছিল। প্রথমত, অনেক প্রবাসী বিদেশে চাকরি হারিয়েছেন কিংবা চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ছিলেন। এসব কারণে তারা সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাতে করোনাকালেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, সরকার রেমিট্যান্সে যে ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, তাতেও বৈধ পথে রেমিট্যান্সের প্রবাহ অনেক বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

মির্জ্জা আজিজ বলেন, এখন সরকার রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেছে। এটি ভালো দিক। তবে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়লে তা কতটা কাজে লাগবে, বলা মুশকিল। কারণ করোনার কারণে যে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন, সে তুলনায় নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। ফলে ভবিষ্যতে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম।

তিনি আরও বলেন, সবশেষ ছয় মাসের মধ্যে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্সের প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ডিসেম্বরে এসে কিছুটা বেড়েছে। এই ঊর্ধ্বগতি কতদিন ধরে রাখা যাবে, তা বলা মুশকিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, করোনার ধাক্কায় সারাবিশ্বের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। এরই মধ্যে আবার করোনার তৃতীয় টেউ শুরু হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রবাসীরা তাদের হাতে থাকা সঞ্চয় ধরে রাখা নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে অনেকেই তাদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ কারণেই হয়তো পাঁচ মাস কমলেও ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে।

করোনাকালে দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের অবদানের কথাও তুলে ধরেন ড. সালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের সময় রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। করোনার অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় এটি বড় ভূমিকা রেখেছে।

বিদায়ী বছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স

বিদায়ী ২০২১ সালে প্রবাসীরা মোট ২ হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ১৮৪ কোটি ২ লাখ ডলার এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বরের ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।

মাসভিত্তিক হিসাব বলছে, বিদায়ী বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ১৭৮ কোটি ৫০ ডলার ডলারে নেমে আসে। মার্চ থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। গত মার্চে ১৯১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, এপ্রিলে আসে ২০৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলার ও মে মাস রেমিট্যান্স আসে ২১৭ কোটি ১১ লাখ ডলার। তবে জুন মাসে তা কিছুটা কমে ১৯৪ কোটি ৮ লাখ ডলারে নেমে আসে।

এরপর জুলাই মাস থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবার কমতে শুরু করে। এর মধ্যে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বরে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। আর নভেম্বরে দেশে আসা ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ছিল এর আগের দেড় বছরের মধ্যে এক মাসের হিসাবে সর্বনিম্ন। সবশেষ ডিসেম্বরে এসে অবশ্য এর পরিমাণ কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১৬২ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড ২ হাজার ৪৭৭ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১ হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

পঞ্জিকাবর্ষের হিসাবে রেমিট্যান্স

২০১৫ সালে প্রথম দেড় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের সীমা ছাড়ায় রেমিট্যান্স। ওই বছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। পরের বছর ২০১৬ সালে তা কমে হয় ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে আরও কিছুটা কমে ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে রেমিট্যান্স।

এর মধ্যে ২০১৮ সালে দেশে রেমিট্যান্স আসে রেকর্ড ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। ২০১৯ সালে তা ১ হাজার ৮৩৩ কোটি মাকির্ন ডলারের নতুন রেকর্ড গড়ে। ২০২০ সালে রেমিট্যান্স প্রথমবারের মতো স্পর্শ করে ২ হাজার কোটি ডলারের ল্যান্ড মার্ক। ওই বছর রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার। ২০২১ সালে সেই রেকর্ডও ভেঙেছে। এ বছর ২ হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এলো দেশে।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

রেকর্ড রেমিট্যান্স রেমিট্যান্স প্রবাহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর