Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছরজুড়ে একনেক বৈঠক ১৫টি, অনুমোদন ১২০ প্রকল্পের

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট
৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৪

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের অভিঘাতে ২০২০ সাল ছিল অনেকটাই স্থবির। সেই স্থবিরতা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে সেই ধাক্কার রেশ রয়েই গেছে। যে কারণে স্বাভাবিক সময়ে মাসে অন্তত তিনটি করে হলেও বছরে জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক হওয়ার কথা ৩৬টি। সেখানে বিদায়ী ২০২১ সালে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ১৫টি।

এদিকে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি মাথায় রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণেও লাগাম টানতে হয়েছে সরকারকে। ফলে একনেক বৈঠকগুলোতে প্রকল্প অনুমোদনের সংখ্যাও কমেছে। গত বছরে সব মিলিয়ে অনুমোদন পেয়েছে ১২০টি প্রকল্প। আর এগুলোর পেছনে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ২৫১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১২০ প্রকল্পের যে ১ লাখ ৪১ হাজার ২৫১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা খরচ, এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকেই আসবে ৮০ হাজার ৫০ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছর যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, তার ৫৬ শতাংশেরও বেশি খরচ ধরা হয়েছে সরকারি তহবিল থেকে। এর বাইরে বৈদেশিক ঋণ থেকে ৫৯ হাজার ৭৩৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ১ হাজার ৪৬৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
বছরজুড়ে যত একনেক বৈঠক

গত বছরের প্রথম একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ৫ জানুয়ারি। ওই বৈঠকে ৯ হাজার ৫৬৯ কোটি ২৩ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জানুয়ারি মাসে একনেক বৈঠক ছিল ওই একটিই।

এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে একনেক বৈঠক হয় দুইটি। এর মধ্যে ৩ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে ১১ হাজার ৩২৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ও ১৬ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে ১৯ হাজার ৮৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় মাত্র একটি একনেক বৈঠক। ১৬ মার্চের ওই বৈঠকে অনুমাদন পায় ৫ হাজার ৬১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রকল্প। এরপর এপ্রিল মাসে কোনো একনেক বৈঠকই হয়নি। মে মাসেও বৈঠক হয় একটি— ৪ মে’র সেই বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় ১১ হাজার ৯০১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার প্রকল্প।
বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে জুন মাস ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম। এ মাসে অনুষ্ঠিত হয় তিনটি একনেক বৈঠক। এর মধ্যে ১ জুন অনুষ্ঠিত বৈঠকে ৫ হাজার ২৩৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা, ৮ জুনের বৈঠকে ৬ হাজার ৬৫১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং ২২ জুনের বৈঠকে ৪ হাজার ১৬৬ কোটি ৬১ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পায়।
জুলাই মাসে অবশ্য ফের একনেক বৈঠক হয় একটি। ২৮ জুলাইয়ের সেই বৈঠকে অনুমোদন পায় ২ হাজার ৫৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার প্রকল্প। আগস্টে আবার বৈঠক হয় দুইটি। এর মধ্যে ১০ আগস্টের বৈঠকে ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ও ২৪ আগস্টের বৈঠকে ৫ হাজার ৪৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

এরপর ৭ সেপ্টেম্বরের একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায় ৭ হাজার ৫৮৯ কোটি ৭২ লাখ টাকার প্রকল্প। এ মাসে আর কোনো একনেক বৈঠক হয়নি। অক্টোবরেও একনেক বৈঠক হয় একটি— ৫ অক্টোবরের সেই বৈঠকে ৬ হাজার ৫৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন পায়।
নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও একটি করে একনেক বৈঠক হয়। এর মধ্যে ২৩ নভেম্বরের বৈঠকে অনুমোদন পেয়েছে ২৯ হাজার ৩৪৪ কোটি ২৭ লাখ টাকার প্রকল্প। আর ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখে একনেক বৈঠকে ৭ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন লাভ করেছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কিছুটা এগিয়ে

এদিকে, প্রকল্প অনুমোদন কম হলেও বিদায়ী বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা গতি বেড়েছে। ধীরে ধীরে ধকল কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে অর্থাৎ ২০২১ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অর্থাৎ এডিপির বাস্তবায়ন তুলানামূলকভাবে বেড়েছে।

এদিকে, একই প্রতিবেদনের তথ্য আরও বলছে, গত জুলাই-অক্টেবর মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ৩০ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের চার মাসে এই ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর মোট ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে যেসব দফতর

গত চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগও এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে রয়েছে।

এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে

গত চার মাসে এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি), আইন ও বিচার বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যস্থাপনা বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে আমাদের বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশের বেশি হয়েছে এই প্রথমবার। বাজেট সহায়তা নিয়ে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা হচ্ছে। ফলে প্রকল্প ঢালাওভাবে নেওয়া হচ্ছে না। যাচাই-বাছাই করেই নেওয়া হচ্ছে। আমরা একেবারেই প্রকল্প নেওয়া বন্ধ করব না। কিন্তু সতকর্তা রয়েছে। ফলে প্রকল্প কম হয়েছে।

এ বিষয়ে আইএমইডির সাবেক সচিব বর্তমান পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমাদের দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমের বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও নানা হিসাব-নিকাশ করতে হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পে বাস্তবায়নের গতি বেড়েছে। করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

একনেক পরিকল্পনা কমিশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর