।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দুই বাসের পাল্লায় হাত হারানো রাজীব হোসেনের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন জানিয়ে ব্রিফিং করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘একটি স্বাভাবিক মানুষের গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস) ১৪-১৫ থাকে। সেটি যখন ৮ এ নেমে আসে তখন আমরা রোগীর অবস্থাকে ক্রিটিক্যাল বলি। রাজীবের জিসিএস এখন তিন প্লাস। যখন জিসিএস তিন এর নিচে চলে যায় তখন মানুষটি আর বেঁচে থাকে না। এ অবস্থায় আমরা রাজীবের জন্য মিরাকল কিছুর অপেক্ষা করছি। আমরা আশাহত হয়েছি।’
মানুষের সজ্ঞানতার মাত্রা বোঝার জন্য মেডিকেল পদ্ধতি হলো গ্লাসগো কোমা স্কেল (জিসিএস)।
ডা. শামসুজ্জামান বলেন, ‘গতকালও (৯ এপ্রিল) রাজীবের একটি সিটি স্ক্যান করা হয়েছিল। সেখানে ভালো রিপোর্ট আসে। আজ সকালে (১০ এপ্রিল) রাজীবের আরও একটি সিটি স্ক্যান করা হয়। সিটি স্ক্যানের এই রিপোর্টের ফল নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। নিশ্চয় ইন্টারনাল কিছু হয়েছে।’
রাজীবের চোখেও সমস্যা দেখা দিয়েছে জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘তার চোখের লাইটিং প্যারামিটারের অবস্থা ভালো না। গতকাল ও আজকের সিটি স্ক্যান রিপোর্টের ব্যবধান অনেক। আজকের সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, তার মস্তিষ্কের ইন্টারনাল অ্যারেজমেন্ট পুরোপুরি বদলে গেছে।’
‘পরশুদিনও রাজীব ভালো ছিল। আমাদের সঙ্গে কথা রাজীবের কথা হয়, আমরাও খুশি ছিলাম। আমরা রাজীবকে বলেছিলাম, তোমার হাত প্রতিস্থাপন করতে হবে। এর জন্য দশ লাখ টাকার মতো লাগবে। আমরা রাজিবকে আশ্বস্থ করেছিলাম, টাকা যোগাড়ের বিষয়ে আমরা কথা বলছি, আশা করি ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
রাজীবের চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মস্তিষ্কের আচরণ সহজে বোঝা যায় না। কারণ এটা ইন্টারনাল ব্যাপার। পরশুদিন রাজীব ভালো ছিল। তার অবস্থা হঠাৎ করেই খারাপ হয়েছে। আজ (১০ এপ্রিল) ভোর ৪টা থেকেই তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তার শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হচ্ছিল। আমরা ওই সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। কিন্তু রাজীবের এখনকার অবস্থা খারাপ। আমরা আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না।’
শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের আহ্বানে রাজীবকে হাসপাতালে দেখতে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি আইসিইউতে গিয়ে প্রায় আধাঘণ্টা রাজীবের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন ও চিকিৎসার বিষয়ে পরামর্শ দেন।
রাজীবকে দেখার পর তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওর অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। সেখানেই তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলবে।’
রাজীবের আর কোনো অস্ত্রোপচার করা হবে কি না জানতে চাইলে ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘না। আপাতত তার কোনো অস্ত্রোপচার করা হবে না। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের ওষুধের পাশাপাশি আমরা প্রেসক্রিপশনে আরও কিছু ওষুধ যোগ করেছি। আগের ওষুধের সঙ্গে নতুন ওষুধ চলবে। আগামী ২৪ ঘণ্টা তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।’
রাজীব হোসেন সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) কারওয়ানবাজারে সোনারগাঁও হোটেলের বিপরীতে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে স্বজন বাস ও বিআরটিসির বাসের পাল্লাপাল্লিতে রাজীবের ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সারাবাংলা/জেএ/একে
আরও পড়ুন
রাজিবকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন নয় : হাইকোর্ট
রাজিবের দুর্ঘটনায় দুই বাসের চালক গ্রেফতার
রাজীবকে ডিএমসিএইচে নেওয়া হয়েছে
রাজীব জানে না তার হাত নেই!
রাজীবের চিকিৎসায় ৭ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড
রাজীবের হাতের ক্ষত অনেকটাই শুকিয়েছে
রাজীবের হাত কাটা পড়ার ঘটনায় দুই বাস চালক রিমান্ডে
রাজীবের হাত কাটা পড়ার ঘটনায় দুই বাস চালক কারাগারে