বর্ষপণ্য আইসিটিতে বাড়বে সুযোগ-সুবিধা, বাড়তে পারে প্রণোদনাও
৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:১৮
ঢাকা: আইসিটি পণ্য ও সেবাকে বর্ষপণ্য ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর ফলে বছরজুড়ে খাতটি সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবে। সরকারের নীতিতে থাকা বিদ্যমান সব প্রতিবন্ধকতা দূর হবে। রফতানি বাড়াতে খাতটিতে বাড়তে পারে প্রণোদনাও। আইসিটি খাতে বাড়বে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও। আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠকে বসতে পারে সরকার। আর তথ্য প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস’র (বেসিস) পক্ষ থেকে তৈরি করা হবে একটি কর্মপরিকল্পনা। সব মিলিয়ে বর্ষপণ্য ঘোষণাকে সুখবর হিসাবে দেখছেন আইসিটি খাতের উদ্যোক্তারা।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস’র (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আইসিটি পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা আমাদের জন্য দারুণ সুখবর। এর ফলে কিছু দায়িত্ব আমাদের উপর এসে পড়বে। অনেকগুলো কাজ আমাদের একসঙ্গে করতে হবে। আমরা একই কাজগুলো করতে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করব। পরিকল্পনায় পণ্যের মান নিশ্চিত ও পণ্যের প্রমোশনের বিষয়টিও থাকবে। দেশে ও বিদেশে আমরা আমাদের পণ্যের প্রমোশন করব। আমরা বেসিস থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে দারুণ সুখবর হিসাবে দেখছি এবং দায়িত্বের সঙ্গে এই ঘোষণাকে গ্রহণ করছি। বেসিস থেকে দায়িত্বের সঙ্গে তা বাস্তবায়নের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।
বেসিসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ম্যান্ডেন্ট নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। তথ্য প্রযুক্তি সেবাকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করায় সরকারের নীতিগুলো আইসিটি খাতের জন্য আরও বেশি ফ্র্যান্ডলি হবে। এর ফলে আগামী বাজেটে বড় ধরণের রিফ্লেকশন দেখা যাবে। সরকারি বিভিন্ন কাজে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে আমরা কাজ করে আসছি। হয়তো শিগগিরই সরকারিভাবে তার ঘোষণা আসবে। এছাড়া ডোনার ফান্ডের যে কাজগুলো দেশে হয় সেখানেও দেশীয় কোম্পানিকে যাতে আগ্রাধিকার দেওয়া হয় তা নিয়েও কাজ চলছে। নতুন বছরে তারও একটি ঘোষণা আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ক্যাশলেস সোসাইটি গড়তে চাচ্ছি, ডিজিটাল লেনদেনে যেন প্রণোদনা বা ইনসেনটিভ দেওয়া হয় সেই দাবি জানিয়ে আসছি। হয়তো এ বছর সেই ঘোষণাও আসতে পারে। ২০২৫ সালের মধ্য আইসিটিতে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, আমরা তা ছাড়িয়ে যেতে পারব বলে প্রত্যাশা করছি। নীতি সহায়তা পেলে এই লক্ষ্য অর্জন অনেকটাই সহজ হবে। আইসিটি সেবাকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, ২০২১ সালের লক্ষ্য আমাদের অনেকটাই অর্জন হয়েছে, এখন নতুন উদ্যোমে শুরু করা দরকার ছিল, নতুন উদ্যোমে শুরু করতে এই ঘোষণা সবাইকে উৎসাহ যোগাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, বর্ষপণ্য ঘোষণা করায় আইসিটি সেবা বা পণ্য সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। খাতটি এখন বহুমাত্রিক সহযোগিতা পাবে। পলিসি লেবেলে যতো সমস্যা আছে তা দূর করা হবে। খাতটির জন্য নানা বিষয়ে প্রণোদনা আরও বাড়তে পারে। সার্বিকভাবে বছর জুড়ে খাতটি আলাদা গুরুত্ব পাবে।
তিনি বলেন, রফতানি বহুমুখীকরণের জন্য একেক বছর একেক পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করা হয়ে থাকে। আমরা একটি পণ্যের উপর নির্ভর করতে চাইনা। আমাদের এক্সপোর্ট বাস্কেটে বিভিন্ন পণ্য যোগ করতে চাই। বর্ষপণ্য ঘোষণা করায় আইসিটি পণ্যের যে সম্ভাবনা রয়েছে তা আরও উজ্জ্বল হয়েছে। এর ফলে খাতটিতে দেশি-বিদেশি বিনিযোগ বাড়বে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায়ীরা যাতে এগিয়ে আসে সেজন্য খাতটি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নানা কর্মপন্থা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে খাতটি নিয়ে এখন নানা ধরণের আলোচনা হবে। সভা-সেমিনার বা বৈঠকের মাধ্যমে খাতটির প্রকৃত সমস্যা আমরা জানতে চেষ্টা করবো। রফতানি বাড়াতে যা যা করা দরকার সর্বাত্মকভাবে সেই চেষ্টা করা হবে।
মন্তব্য জানতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে একাধিবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে পারেননি। বিভাগটির একজন অতিরিক্ত সচিবকে কল দেওয়া হলে তিনিও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।
তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, পৃথিবীর বহুদেশে আমরা এখন মোবাইল রফতানি করছি। দেশেই ফাইজি সেট উৎপাদিত হচ্ছে। ৮০টি দেশে সফটওয়্যার রফতানি করছি। রফতানির উপর ১০ শতাংশ প্রণোদনা রয়েছে। এখন ল্যাপটপ আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে দিলে দেশেই ল্যাপটপ এসেমব্লিং হবে অথবা দেশেই ল্যাপট উৎপাদন হবে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, এই ঘোষণার ফলে তা আরও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। কারণ আমরা এখন সফটওয়্যার ও সেবা রফতানিতে পুরো প্রস্তুত। ডিজিটাল যন্ত্র রফতানিতেও আমরা তৈরি হচ্ছি। ডিজিটাল যন্ত্র রফতানিতেও আমরা এখন সক্ষমতা রাখি। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আইসিটি পণ্য বা সেবা রফতানির গতি আরও ত্বরাণ্বিত করবে।
প্রসঙ্গত, আইসিটি পণ্য সেবাকে ২০২২ সালের বর্ষপণ্য বা প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বছরের প্রথমদিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পণ্যভিত্তিক রফতানিকে উৎসাহিত করতে প্রতিবছর একটি পণ্যকে ‘বর্ষপণ্য’ ঘোষণার রীতি অনুযায়ী অতীতে চামড়া, পাট, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতিকে বর্ষপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এসএসএ