Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১০ হাজারে মিলত ১ লাখ টাকার জাল নোট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ জানুয়ারি ২০২২ ১৪:৩৯

ঢাকা: এক লাখ টাকা মূল্যের জাল নোট বিক্রি হতো ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে। সেই জাল টাকা আবার তৈরি হতো টিস্যু পেপার দিয়ে।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকার জালনোট জব্দ করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)। এ সময় মূলহোতাসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

খন্দকার আল মঈন জানান, ২৮ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মিরপুর মডেল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট তৈরি ও বিক্রয়কারী চক্রের চার সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা সমমানের জালনোট জব্দ করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে মূলহোতা সম্পর্কে জানা যায়।

সেই অভিযানকে কেন্দ্র করে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। সবশেষ মিরপুর পল্লবী এলাকা থেকে জালনোট তৈরির মূলহোতা ছগির হোসেন (৪৭), সেলিনা আকতার পাখি (২০) ও রুহুল আমীনকে (৩০) আটক করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুইটি ল্যাপটপ, একটি সিপিইউ, একটি মনিটর, তিনটি প্রিন্টার, একটি হ্যান্ড এয়ারড্রয়ারসহ জাল নোট তৈরির বিপুল পরিমান সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা আরও জানায়, তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় এই জাল নোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে স্বল্পমূল্যে জাল নোট বিক্রি করে আসছে। এ চক্রটির মূলহোতা মো. ছগির হোসেন এবং অন্যান্যরা তার সহযোগী।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারকৃতরা জানান, তারা বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই জাল নোটের ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই চক্রের সাথে ১৫-২০ জন সদস্য জড়িত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ চক্রের মূলহোতা ছগির নিজেই স্থানীয় বাজার হতে জাল নোট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি ক্রয় করে তার ভাড়া বাসায় গোপনে বিশেষ কৌশলে এ-৪ সাইজের দুইটি টিস্যু পেপার একসঙ্গে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রঙ্গিন প্রিন্টারে ডিজাইনকৃত টাকা তৈরি করতেন। তিনি স্থানীয় বাজার থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দোকান হতে এসব জাল নোট তৈরির সরঞ্জামাদি ক্রয় করতেন। তিনি নিজেই প্রিন্টিং ও কাটিং করতেন। প্রিন্টিংয়ের কাজে অন্যান্যদের সম্পৃক্ত করা হতো না। জাল নোট তৈরির পর তিনি তার অন্যান্য সহযোগীদেরকে মোবাইলে কল করে তার কাছ থেকে জাল নোট নিয়ে যেতে বলতেন। প্রতি এক লাখ জাল নোট ১০-১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন।

মো. ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেয়। পরবর্তীতে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয় করতেন। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয়ের সময় আসামি ছগিরের সঙ্গে জনৈক ইদ্রিস নামক একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইদ্রিসের মাধ্যমে তার জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি হয়। প্রথমে তিনি জাল নোট বিক্রি ও পরবর্তীতে জাল নোট তৈরির বিষয় রপ্ত করে। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। এক বছর জেল খেটে পুনরায় তিনি ২০১৮ সাল হতে জাল নোট তৈরি শুরু করে। তৈরিকৃত জাল নোটগুলো তার চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগী গ্রেফতারকৃত রুহুল আমিন, সেলিনা ও অন্যান্য ৭/৮ জনের মাধ্যমে বিক্রয় করে।

গ্রেফতার সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বর্তমানে তিনি জেলে আছেন। সেলিনা ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীর চরে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের সঙ্গ তার পরিচয় হয় এবং তিনি নিজেও এ চক্রে জড়িয়ে জাল নোটের ব্যবসা শুরু করেন।

গ্রেফতার অপর আসামি রুহুল আমিন মূলতঃ এ চক্রের মূলহোতা ছগিরের অন্যতম সহযোগী। রুহুল আমিনের মাধ্যমে ছগিরের অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয়। রুহুল আমিন জাল নোট তৈরি ও বিক্রয়ের মামলায় ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে জেলে ছিল এবং বর্তমানে তার নামে মামলা চলমান রয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/এএম

জাল নোট টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর