ছিনতাইকারী ডিপজলের সহযোগী পাঠাও চালক!
৪ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৪৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী সাত্তার শাহ ডিপজল। নগরীর পতেঙ্গা-ইপিজেডসহ আশপাশের এলাকায় মোবাইলভিত্তিক অর্থ স্থানান্তরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের টার্গেট করে ছিনতাই করে সে ও তার গ্রুপের সদস্যরা। এক মাস আগে বিকাশের এক প্রতিনিধির কাছ থেকে টাকাভর্তি ব্যাগ কেড়ে নেওয়ার সময় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তার দুই হাতের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
নগরীর পতেঙ্গা থানা পুলিশ সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে ছিনতাইকারী ডিপজল, তার স্ত্রী এবং আরও দুই সহযোগীসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। ওই ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান পাঠাওয়ের দুই মোটরসাইকেল চালক জড়িত। তারা মোটরসাইকেলে যাত্রী বহনের পাশাপাশি নগদ টাকা বহনকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে ছিনতাইকারীদের সরবরাহ করে। গ্রেফতার চারজনের মধ্যে একজন পাঠাও চালক। এছাড়া আরেকজন পলাতক রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের ঘটনাস্থলের আশপাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার ২০টি পয়েন্টে কমপক্ষে ১০০ সিসি ক্যামেরার এক মাসের ফুটেজ পর্যালোচনা করে সাত্তার শাহ ডিপজলকে (৪১) গ্রেফতার করা হয়। তার বাসা চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার খালাপাড় এলাকায় কাজীর গলিতে। বাসা থেকে পুলিশ ডিপজলের সঙ্গে তার স্ত্রী রোজিনা বেগমকেও (২৭) গ্রেফতার করে। ডিপজলের কাছ থেকে একটি এলজি, এক রাউন্ড কার্তুজ এবং পাঁচটি এক হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়। এছাড়া রোজিনার কাছ থেকে ৫০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
একই বাসা থেকে ডিপজলের সহযোগী ছিনতাইকারী রাজু দেবনাথকে (৩৬) গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালক আব্দুল্লাহ্ আল মারুফকে (২২) নগরীর বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার মারুফ রাইড পাঠাওয়ের চালক। তার সঙ্গে জড়িত রুবেলকে এখন পুলিশ গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কবির হোসেন সারাবাংলাকে জানান, গত ৫ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পতেঙ্গার মাইজপাড়া এলাকায় টাকা নিয়ে যাবার সময় আসলাম নামে এক বিকাশ প্রতিনিধিকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে ছিনতাইকারীরা। তাই দুই হাতের কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্তে প্রথমে ডিপজল ও রাজুকে শনাক্ত করা হয়। তাদের মাধ্যমে দুই পাঠাও চালক মারুফ ও রাজুর তথ্য পাওয়া যায়। মারুফ ও রাজু পাঠাও চালানোর পাশাপাশি নগদ টাকা বহনের তথ্য দেয় ডিপজল গ্রুপকে। ওই গ্রুপ নগদ টাকা বহনকারী বিশেষত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টদের টার্গেট করে ছিনতাই করে।
‘আসলাম প্রতিদিন তিন লাখের বেশি নগদ টাকা উত্তোলন ও বহন করে বলে তথ্য পায় রুবেল। পরে সে বিষয়টি মারুফকে জানায়। মারুফ ডিপজলের সহযোগী রাজুকে এ তথ্য দেয়। ঘটনার দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী মারুফের মোটরসাইকেলে করে ডিপজল ও রাজু পতেঙ্গা কন্ট্রোল মোড় এলাকায় অবস্থান নেন। রুবেল আরেকটি মোটরসাইকেলে এসে আসলামকে দেখিয়ে দিয়ে দূরে অবস্থান নেয়। ছিনতাইয়ে অংশ নেয় ডিপজল, রাজু ও মারুফ। রুবেলকে ধরতে পটিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালানো হয়, কিন্তু তাকে ধরা যায়নি। ছিনতাইকারী ধরতে গিয়ে পাওয়া যায় ইয়াবা, অস্ত্র ও জাল টাকা’- বলেন ওসি কবির হোসেন।
ওসি জানান, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ডিপজল মাদকের কারবারেও জড়িত। তার স্ত্রী ইয়াবা সরবরাহ করে। অস্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা তিন মামলার মধ্যে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ডিপজলকে এবং মাদক মামলায় ডিপজল ও তার স্ত্রী রোজিনাকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ডিপজলের বিরুদ্ধে আরও অন্তত ১৯টি মামলা রয়েছে। এই গ্রুপের অন্তত ১৫ ছিনতাইকারী সক্রিয়।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম