১৪৪ ধারা ভেঙে বেরিয়ে আসছে মানুষ: রিজভী
৪ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৫৪
ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বর্তমান সময় সংকটময় ও সমস্যাদীর্ণ গণতন্ত্রের সময়। কিন্তু মানুষ আর বসে থাকছে না। ১৪৪ ধারা ভেঙে বেরিয়ে আসছে মানুষ। বিএনপি যেখানেই সমাবেশ করছে, সেখানেই মানুষের ঢল নামছে। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠছে মানুষ।’
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আগামীকাল ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন। আট বছর আগে ২০১৪ সালের এই দিনে সারাদেশে ভোটার ও বিরোধী দলের প্রার্থীবিহীন একতরফা বিতর্কিত, প্রতারণামূলক, হাস্যকর ও শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রহসনমুলক একদলীয় পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশ-বিদেশে প্রত্যাখ্যাত, জনধিকৃত একদলীয় নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ আবারও সারা দুনিয়ায় নিজেদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে।
‘আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে গণহত্যা, খুন, গুম, নির্যাতন চালিয়েও ভোটারদের কাছে থেকে ন্যূনতম ভোট আদায় করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সারাদেশে নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিল একদম ফাঁকা। অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে ছিল ভোটারশূন্য’- বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সোয়া এক বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি। সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি-কারচুপির আশ্রয় নিতে হয়েছিল তাদের। সেবার ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিয়েছিল ২৯৩ আসন। মাত্র ৭টি আসন বিরোধী দলকে দেওয়া হয়েছি। দলের প্রার্থীকে জেতাতে হেলিকপ্টারে করে ব্যালটবাক্স ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দুর্নীতি, সন্ত্রাস গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ, আওয়ামী লীগের ইতিহাসে নতুন নয়।’
রিজভী বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনি সংস্কৃতিকে আওয়ামী লীগ কখনোই পাত্তা দেয় না। জনগণের ক্ষমতার প্রতি অবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে পরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছিল। এরপর যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তা ছিল একতরফা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, নিশিরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি, পাইকারীহারে জালভোট প্রদান, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, লাশের ভোট প্রদান, গায়েবি ভোটসহ এক অভিনব ভোটের উদাহরণ।’
‘সে ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে একই কায়দায় মানুষের অধিকার হরণ করা হয়। নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলে আগের রাতে ভোট দিয়ে এই সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। বর্তমানে দেশ থেকে গণতন্ত্র নির্বাসিত। মানুষের বাকস্বাধীনতায় তালা মেরে দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে নেওয়া হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রায়ের আগেই বিচারপতিদের স্কাইপি আলাপ দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারে। বিচারকরা আদেশ দেওয়ার আগে তাকিয়ে থাকেন নির্বাহী বিভাগের দিকে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নব্যবাকশাল নিষ্ঠুর নাৎসিবাদকেও হার মানিয়েছে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের ওপর চলছে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। কথায় কথায় জারি করা হচ্ছে বিরোধী দলের সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা। সত্য উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের ওপর নেমে আসে নানা কালাকানুন অথবা গুম-খুনের মতো ঘটনা। কথা বললেই নেমে আসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার খড়গ।’
কর্মসূচি:
গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বুধবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১০ টায় মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান রিজভী।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস