মঠবাড়িয়ার ৪ ইউপিতে ভোট— স্মৃতিতে ৬ বছর আগের ৫ প্রাণহানি
৪ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৩৯
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর): পঞ্চম ধাপে চার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস। উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক অধিবাসীর মধ্যেও লেগেছে ভোটের আমেজ। তবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও কম নেই। ছয় বছর আগের ইউপি নির্বাচনের দিনে যে নির্বাচনির সহিংসতার জের ধরে হারিয়েছিল পাঁচ পাঁচটি প্রাণ। তবে নির্বাচন অফিস থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসন বলছে, নির্বাচন ঘিরে যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। ফলে ভোটাররা নির্বিঘ্নে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা।
আগামীকাল বুধবার (৫ জানুয়ারি) মঠবাড়িয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদ— দাউদখালী, ধানীসাফা, টিকিকাটা ও বড়মাছুয়ায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দেবেন ভোটাররা। চার ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৯ জন প্রার্থী। মোট ভোটার ৬৯ হাজার ২৬ জন, ভোটকেন্দ্র ৩৬টি। এর মধ্যে ধানীসাফা ও বড়মাছুয়া ইউনিয়নের ১৮টি ভোটকেন্দ্রকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপজেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের চোখও নিবদ্ধ এই চার ইউনিয়নেই।
এবারের ইউপি নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ধানীসাফা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ জন। এর মধ্য নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুন অর রশীদ তালুকদার। দলের মনোনয়ন না পেয়ে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রভাষক রফিকুল ইসলাম। এই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বাকি প্রার্থীরা হলেন— আবু জাফর হাওলাদার, আজিজুর রহমান, এ এইচ এম জামাল উদ্দিন, শহীদুল হক, ইউসুফ আলী সরদার, কাঞ্চন আলী শিকদার, মো. মামুন, সাইদুল মল্লিক ও মো. শামীম আহসান।
দাউদখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৯ জন। নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান রাহাত নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্রতিপক্ষ সেকান্দার আলী খান (লাঙ্গল), আব্দুস শুক্কুর তালুকদার (বাইসাইকেল), মো. নূরুল ইসলাম মোল্লা (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন জাহিদুল আলম শামীম, মো. আইউব আলী খান, মো. জাহাঙ্গীর খান, এ কে এম মাহমুদুল হাসান তৌফিক ও মুছা তালুকদার।
এদিকে, টিকিকাটা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোট ১৬ জন! এর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন জমাদ্দার ফের নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন— মহিউদ্দিন আহমেদ লাবু মৃধা (হাতপাখা) ও সুফী জহির উদ্দীন (লাঙ্গল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা আক্তার, মো. শহিদুল ইসলাম, এনামুর রহমান, মো. আব্দুল হালিম, কামরুজ্জামান স্বপন খান, দুলাল হাওলাদার, মাইনুল ইসলাম, মো. বশির আহমেদ, ছিদ্দিকুর রহমান, মো. আব্দুল লতিফ, মো. জামাল শিকদার, মো. হাবিবুর রহমান ও মো. নুরুল আমিন।
সে তুলনায় বড়মাছুয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী একেবারেই কম— তিন জন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন আয়েশা আক্তার মনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে জসিম হাওলাদার এবং চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী নাসির হোসেন হাওলাদার।
এত বিপুল পরিমাণ প্রার্থী থাকলেও স্থানীয়রা বলছেন, ইউপি নির্বাচনে মূল ভোটযুদ্ধটা হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে দলের মনোনয়নবঞ্চিত ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদেরই। লাঙ্গল বা হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী থাকলেও তারা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারবেন না এই নির্বাচনে।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন জানিয়েছেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উৎকণ্ঠাহীন একটি নির্বাচন উপহার দিতে তারা বদ্ধপরিবার। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।
যা ঘটেছিল ৬ বছর আগে
২০১৬ সালের ২২ মার্চ ধানীসাফা ইউনিয়নের ধানীসাফা ডিগ্রি কলেজ ভোটকেন্দ্রে ঘটেছিল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। ভোট শেষে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুন অর রশিদের কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে প্রিজাইডিং অফিসারের বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির পর এক পর্যায়ে ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও বিজিবি গুলি করে। এতে পাঁচ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও অন্তত ২০ জন।
এ ঘটনায় ভোটকেন্দ্রে সরকারি কাজে বাধা, হামলা-ভাঙচুর, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা অন্তত ১৩শ জনকে আসামি করে মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন ওই কেন্দ্রের দ্বায়িত্বরত একজন উপপরিদর্শক (এসআই)। সে মামলার নিষ্পত্তি এখনো হয়নি।
সারাবাংলা/টিআর
ইউপি নির্বাচন টিকিকাটা ইউনিয়ন দাউদখালী ইউনিয়ন ধানীসাফা ইউনিয়ন বড়মাছুয়া ইউনিয়ন মঠবাড়িয়া উপজেলা