Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখন কেউ করুণা করার সাহস পায় না: শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৫ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মাসেতু নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। এই একটা সিদ্ধান্ত থেকেই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে। এখন কেউ আমাদের করুণা করতে সাহস পায় না বরং সমীহ করে চলতে পারে।

বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে সারাবিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। কিন্তু ২০৪১ সাল পর্যন্ত তো আমি থাকব না, আর বাঁচবও না। কিন্তু একটা কাঠামো দিয়ে গেলাম, একটি পরিকল্পনা দিয়ে গেলাম। যেমন— ২০১০ থেকে ২০২০ দিয়েছিলাম। তারই ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করেছি। ঠিক একইসঙ্গে ২০৪১-এ আমাদের যে লক্ষ্য সেটা মাথায় রেখে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করেছি।’

এ বিষেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘এই ছাত্ররাই শিক্ষিত জাতি হিসাবে গড়ে উঠবে। কাজেই তাদেরই সেভাবে তৈরি হতে হবে। ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে নিজেদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০৭১ সাল স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন হবে। আমরা যেমন স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করলাম, শতবর্ষ যারা উদযাপন করবে- সেই প্রজন্ম তৈরি করতে হবে এখন থেকেই।’

শিক্ষাসহ সব দিক থেকে শতবর্ষের বাংলাদেশ কেমন হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা দিয়েছি। ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ অর্থ্যাৎ এই বদ্বীপটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেমন উন্নত হবে। তার কিছু কাজও আমরা শুরু করেছি। অন্তত ৮০টা প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছি। আমাদের উন্নয়নের লক্ষ্য যেনতেন না। এটা হবে স্থায়ী উন্নয়ন এবং সেটা একেবারে গ্রামের তৃণমূল থেকে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে স্থির করেছি, একেবারে গ্রামের তৃণমূল থেকে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের তালিকা করে তাদের ঘর করে দিচ্ছি। যেটা স্বাধীনতার পরপর শুরু করেছিলেন জাতির পিতা। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে গুচ্ছগ্রাম, আদর্শগ্রাম এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

এ বিষেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই তোমরা ছুটিতে বাড়িতে যাবে, কোনো মানুষ ভূমিহীন আছে কি না নিশ্চয়ই তা খুঁজে বের করবে। একটি মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। কারণ প্রত্যেক ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। একইসঙ্গে প্রত্যেকটা গৃহহীন মানুষকে যদি ঘর করে দেই, তাহলে বাংলাদেশ দরিদ্র্য মানুষ থাকবে না। হতদরিদ্র্য বলে তো কেউ থাকবেই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা একদিন বাংলাদেশের ম্বাধীনতা নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেছিল— স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশের কি হবে, একটা বাস্কেটকেস হবে। সেই দেশগুলোতে যে দারিদ্র্যের হার আছে তার থেকে এক শতাংশ হলেও বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমাব— এটাই আমার লক্ষ্য। তাদের দেখাতে চাই, আমরাও পারি।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে একটি সিদ্ধান্ত থেকে। যেদিন পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করল, দুর্নীতি হয়েছে— যাদিও বিশ্বব্যাংক তা প্রমাণ করতে পারেনি। সেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিলাম এবং তারপরেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যারা এক সময় তাদের কাছ থেকে ঋণ নিলে মনে করত, আমাদের করুণা করেছে। সেই চিন্তা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে এনেছি। যেমন ঋণ নেই, সুদসহ আমরা তা শোধও করে দেই। সেটা কোনো অনুদান না।’

‘কাজেই আমরা কিন্তু এখন পরনির্ভরশীল না। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে পারি। আমরা তা করে দেখিয়েছি। এই একটা সিদ্ধান্ত থেকেই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে। এখন কেউ আমাদের করুণা করতে সাহস পায় না বরং আমাদের সমীহ করে চলতে পারে’- বলেন শেখ হাসিনা।

এই অর্জনটা ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই পাকিস্তানের সৃষ্টির পর থেকেই দেখি- আমাদের দেশের কিছু মানুষ সবসময় সবসময় কোনো একটা প্রভু খুঁজে নিয়ে তাদের পদলেহন করতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কোনো আত্মমর্যাদা বোধ নেই। তাদের নিজের প্রতি কোনো আত্মবিশ্বাস নেই এবং এদের দিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণ হয় না।’

‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে— এই মাটি-মানুষ দিয়েই দেশ গড়ব’ বঙ্গবন্ধুর এই উক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মাটি-মানুষ দিয়েই দেশ গড়া যায়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। কাজেই আমি এইটুকু চাইব, রাজনীতিক নেতা হিসাবে যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাও তাদের আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হবে। চলমান বিশ্বে সবসময় নিজেদের ওই গতি ও লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সংগঠনের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান। সাবেকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ড লীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, হুইপ ইকবালুর রহিম, অসীম কুমার উকিল, অজয় কর খোকন, একেএম এনামুল হক শামীম, লিয়াকত শিকদার, বাহাদুর বেপারী, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনসহ বাকিরা। সভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

সারাবাংলা/এনআর/এনএস

৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর