ভোলা সদরের ১২ ইউপির ভোটে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ
৫ জানুয়ারি ২০২২ ২২:২৯
ভোলা: পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ভোলা সদর উপজেলার ১২টি ইউপি ভোট হয়েছে। নির্বাচনি সহিংসতায় কোনো প্রাণহানি না ঘটলেও কয়েকটি কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত সংর্ঘষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ জন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ১০ জনকে ভোলা সদর হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সহিংসতার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন দুই সদস্য প্রার্থী।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ভোলা সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের চৌমুহনী মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও বাকবিতণ্ডা নিয়ে মেম্বার প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের বাবাকে প্রতিপক্ষ শাহিন মালের সর্মথকরা মারধর করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চৌমুহনী বাজার এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় মারধরে দুই পক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন। এর জের ধরে ওই কেন্দ্রে কিছু সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকলেও পরে স্বাভাবিক হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রায়হানুল ইসলাম বলেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনো ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই দুই মেম্বার প্রার্থীকে আটক করা হয়েছে।
উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে নিজামউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকায় সদস্য প্রার্থী আবু তাহের লোকমানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দুপুর ২টার দিকে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রায় আধা ঘণ্টার এই সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ, কোস্টগার্ড ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
একই সময়ে ইউনিয়নের গাজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে দিনভর ওই এলাকায় বিভিন্ন গ্রুপের মহড়া দেখা গেছে।
এদিকে, ভোলা সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মুরাদছবুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১১টার দিকে দুই সদস্য প্রার্থী রফিক ও মালেকের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় তিন জন আহত হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অন্যদিকে, রাজাপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক প্রার্থীর সমর্থকরা জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকেলে এ কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ১০ জনকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ভোটের শেষ সময়ে বাপ্তা ইউনিয়নে ৮ নম্বর ওয়ার্ড কেন্দ্রে মো. শাজাহান ও মো. কামাল নামের দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় আইন শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী দুই সদস্য প্রার্থীকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর কেন্দ্রে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে, স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, সবগুলো কেন্দ্রেই ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল। কিছু বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও সার্বিকভাবে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বড় ধরনের কোনো সহিংসতাও হয়নি।
সারাবাংলা/টিআর