একটি সেতুর জন্য আক্ষেপ কয়েক হাজার মানুষের
৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৫৭
দিনাজপুর: জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা হিলি-হাকিমপুর। উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বদিকে তুলশীগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আলীহাট ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নকে দুইভাবে বিভক্ত করেছে এই নদীটি। এই নদীর পূর্বপাশে বাঁশমুড়ি বাজার ও ডুগডুগী বাজারের অবস্থান। এই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের পাশাপাশি ঘোড়াঘাট ও পাঁচবিবি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারাও এই নদী ব্যবহার করে পারাপার হয়ে থাকেন। প্রতিশ্রুতি মিলেছে বহুবার,কিন্তু দিন মাস পেরিয়ে বছর যায় সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখে না মানুষ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও তুলশীগঙ্গা নদীর ওপরে হয়নি সেই কাঙ্ক্ষিত সেতু।
এ পরিস্থিতিতে অনেকটাই জনপ্রতিনিধিদের ওপর অভিমান করে ২০০ ফুটের একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করেছেন স্থানীয়রা। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর কাঠের সেতুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে আবারও বিপাকে পড়েছে উপজেলার ছোট আলীহাট,বাঁশমুড়ি, কাশিয়াডাঙ্গাসহ ৮টি গ্রামের মানুষ। তাই এবার প্রতিশ্রুতি নয়,দ্রুত একটি সেতু বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই তুলশীগঙ্গা নদী পারাপারে নৌকা ব্যবহার করেন বাঁশমুড়ি,ছোট আলীহাট, পাঁচবিবি ও ঘোড়াঘাট উপজেলার কয়েক হাজার বাসিন্দারা। কিন্তু নৌকায় নদী পাড়ি দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে নদীতে একটি কারে সেতু করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। জনপ্রতিনিধিরা সেতু করে দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিও দেন বারবার। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও হয়নি সেই সেতু। সেতুটি নির্মাণ হলে উপজেলার প্রায় কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হবে। একইসঙ্গে মানুষের জীবন মানেরও উন্নয়ন ঘটবে।
আমজাদ হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই এই নদীর ওপর সেতু বানিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। নির্বাচন এলেই এমপি-চেয়ারম্যানরা বলেন সেতু করে দেবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেতুর কোনো হদিস নেই। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তা-ঘাট ও সেতু হয়েছে, অথচ এখনো সেতুর অভাবে কাঠের সাঁকো দিয়ে নদী পার হতে হয় দুই পাড়ের মানুষজনদের। সেটাও আবার এখন নষ্ট হইছে।
আলীহাট ইউনিয়নের কাশিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সেতু না থাকার কারণে মাথায় করে মালামাল নিয়ে সাঁকো পার হতে হয়। যদি সেতু থাকত তাহলে আর কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকত না। দ্রুত একটি সেতু করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।
আরেক বাসিন্দা আহম্মেদ আলী জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এই নদীর ওপর সেতু হবে-হচ্ছে বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন ইউনিয়নের লাখো মানুষ। সেতুর অভাবে মানুষজন অনেক কষ্ট করে নদী পার হয়। অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। মাঝে-মধ্যে যখন এই সাঁকো ভেঙে পড়ে, তখন মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে অনতিবিলম্বে একটি সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন।
আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বলেন, এই ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের মানুষের দুঃখ দূর করতে তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে আমরা বারবার যোগাযোগ করছি। আশা করছি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, আমাদের হাকিমপুর উপজেলার আলীহাট ইউনিয়নের তুলশীগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তা বাস্তবায় হয়নি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেতুটি নির্মাণের জন্য আশ্বস্ত করছেন। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এটি দৃষ্টি নন্দন একটি সেতু হবে। আশা করছি খুব দ্রুতই সেতুটি নির্মাণ হবে।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর এ আলম বলেন, আমরা আলীহাট ইউনিয়নের মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা চিন্তা করে তুলশীগঙ্গা নদীর ওপরে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য এলজিইডি মাধ্যমে টেন্ডারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
সারাবাংলা/এনএস