‘বিচ্ছিন্ন ঘটনার ফলাও প্রচারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে’
৬ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিচ্ছিন্ন ঘটনার ফলাও করে প্রচার করে পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি না করার আহ্বান জানিয়েছেন বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। ইকোট্যুরিজম মেনে বিদেশি পর্যটকদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকালে নগরীর পেনিনসুলা হোটেলে ১২তম চিটাগাং ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকা ‘মনিটর’ তিনদিনের এই মেলার আয়োজন করেছে।
সম্প্রতি কক্সবাজারে এক নারীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ, বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিমানের ধাক্কায় গরুর মৃত্যু এবং হোটেল-রেস্তোঁরায় বাড়তি অর্থ আদায় নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘ছোট ঘটনা, বিচ্ছিন্ন ঘটনা ফলাও করে প্রচার করলে একটা নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়। কারণ একটা নিউজ যখন প্রচার হয়, সেটা দেশি-বিদেশি পর্যটকরা দেখেন এবং বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে শুরু করেন। পর্যটন সেক্টরের ওপর এর প্রভাবটা সবচেয়ে বেশি পড়ে। সাংবাদিকদের অনুরোধ করছি- ছোট ঘটনাকে যেন বড় আকারে উপস্থাপন করা না হয়।’
দেশে ফ্লাইট আর হোটেল ভাড়া অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য আনুষাঙ্গিক যেসব সুযোগ-সুবিধা, সেগুলো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে অনেক বেশি সহজলভ্য। সুতরাং পর্যটকরা যাতে বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাদের জন্য সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।’
উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি পর্যটক যাতে এদেশে আসতে পারে, নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক্সক্লুসিভ জোন করা হচ্ছে। আমরা একটা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছি। করোনার কারণে একটু ধীরগতি হয়েছে। তবে এখন দ্রুত হয়ে যাবে। কোথায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস দরকার, ইকোট্যুরিজম মেইনটেইন করে কোথায় কি প্রকল্প নিতে হবে- এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের প্রত্যেক জেলায় ট্যুরিস্ট স্পট তৈরির প্রকল্প নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকগুলো প্রকল্প আমরা নিয়েছি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের প্রত্যেক এলাকার জন্য প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। একজন ট্যুরিস্ট, দেশি হোক আর বিদেশি হোক, তিনি যাতে স্পটে গিয়ে ওয়াশরুম পায়, চেঞ্জিং রুম, রেস্টরুম, ব্রেস্টফিডিং রুমসহ আনুষাঙ্গিক সকল সুযোগ-সুবিধা পান, সেই ব্যবস্থা প্রকল্পে আছে। নকশা হয়ে গেছে। কাজও শুরু হবে। সামগ্রিক অর্থে পর্যটক এসে যাতে নিরাপদ বোধ করেন এবং তার যেসব আনুষাঙ্গিক সুবিধা প্রয়োজন- সেই জিনিসগুলো প্রত্যেকটি স্পটে যাতে তৈরি হয় সেই উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।’
ইকোটুরিজ্যমের ধারণা নিয়েই বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
চট্টগ্রামের পারকি সমুদ্র সৈকতে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে উল্লেখ করে তিনি জানান, পারকিতে মানসম্মত আহার ও রাতযাপনের ব্যবস্থা হচ্ছে। একইভাবে কক্সবাজারে শেখ হাসিনা টাওয়ার ও খুরুশকুলে আরও একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
পুরো কক্সবাজারকে দৃষ্টিনন্দন করার কাজ চলছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে নেমে যে রাস্তাঘাট, এগুলো একেবারেই দৃষ্টিনন্দন না। কক্সবাজার শহরের প্রত্যেকটি রাস্তা নতুনভাবে করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরাট একটা বাজেট দিয়েছেন। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করেছেন। সেখানে তারা অনেকগুলো প্রকল্প নিয়েছে, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়ে গেলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে।’
মেট্রোরেল হলে চট্টগ্রাম শহর আরও উপভোগ্য হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর আরও সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এক বছরের মধ্যে হয়ত আনুষাঙ্গিক কাজটা সমাপ্ত হবে। সৈয়দপুরে খুবই নান্দনিক একটা বিমানবন্দর করেছি। রাজশাহীতে টেন্ডার দিয়েছি। সিলেটে নতুন টার্মিনালের কাজ শুরু হয়েছে। বিদেশি নান্দনিক বিমানবন্দরের নকশা সামনে রেখে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে দেশের বিমানবন্দরগুলোকে।’
মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
পর্যটন মেলায় বিভিন্ন বিমান সংস্থা, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল-মোটেলসহ সংশ্লিষ্ট ২৬টি প্রতিষ্ঠানের স্টল আছে। মেলার সময় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। আগামী শনিবার মেলা শেষ হবে।
সারাবাংলা/আরডি/এমও