Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবার গ্যাসে ট্রেন পরিচালনার উদ্যোগ

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:০৫

ঢাকা: দেশের অন্যান্য গণপরিবহনের মতো রেল সেবাতেও পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে সরকার। রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, সরকার ডিজেলের পাশাপাশি তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলএনজি) এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছি। সেজন্য বর্তমান রেলের ইঞ্জিনগুলোকে ডুয়েল ফুয়েল ব্যবস্থায় রূপান্তর করতে হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যেসকল দেশে রেল পরিচালনায় গ্যাস ব্যবহার করা হয়, তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব পরিকল্পনার কথা জানান রেলপথ মন্ত্রী।

বিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত রেলের ইঞ্জিনগুলো ছিল বাষ্পচালিত। বর্তমানে ট্রেন চলাচলে জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর ফলে পরিবেশগত ঝুঁকি থেকে যায়। বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ কমানোর যে উদ্যোগ রয়েছে, সে উদ্যোগে জোর দিয়ে বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার কমাতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। তেমনই রেলে ডিজেলের ব্যবহার কমিয়ে গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে চায়। এ লক্ষ্যে পূর্ণ ধারনা পেতে বিশ্বের কয়েকটি দেশ ঘুরে এসেছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া সফর করেছেন। ঘুরে দেখেছেন সেসব দেশ কীভাবে রেল পরিচালনা করে।

এই পরিকল্পনা বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী সারাবাংলাকে বলেন, আমরা ট্রেন ইঞ্জিনে দুই ধরনের অপশন রাখতে চাই। ট্রেন চলাচলে গ্যাস ব্যবহার করা গেলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে পরিবেশসম্মত হবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমে আসবে।

তিনি বলেন, ট্রেনের ইঞ্জিনগুলোকে সিএনজি বা এলএনজিতে রূপান্তর করতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করেছি। যুক্তরাজ্যের জি-ভলুশন ও এক্সপ্রোনেট কোম্পানি ডিজেল চালিত ইঞ্জিনকে সিএনজি বা এলএনজিতে রূপান্তর করে ডুয়েল ফুয়েল ব্যবস্থা করতে পারে। তাদেরকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা বলেছি তোমরা একটা পাইলট প্রোগ্রাম নাও আমাদের এখানে (বাংলাদেশে)। ওই প্রযুক্তিটাই ভিন্ন। একটা হুইলের ওপরে দুইটা ওয়াগন নির্ভরশীল। হুইল গুলো সহজ, যে কারণে ব্রডগেজের মতো ফ্ল্যাক্সিবেল। এই ব্যবস্থা পরিবেশ বান্ধব, সাশ্রয়ী এবং টেকসই। ট্রেনে গ্যাসের ব্যবহার করতে রাশিয়ার ট্রান্সম্যাশহোল্ডিং- টিএমএইচ কোম্পানির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের মাধ্যমে ট্রেন পরিচালনার জন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

রেলপথ মন্ত্রী জানান, বর্তমানে আমাদের সকল ট্রেন ডিজেল চালিত। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন চালুর জন্য একটি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎচালিত ট্রেন ব্যয়বহুল হওয়ায় এই প্রযুক্তি ট্রেনে নিয়ে আসতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ দরকার, তা এখনি সংস্থান করা সম্ভব না। সেজন্যই আপাতত ট্রেন পরিচালনায় গ্যাসের ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা রেলযাত্রা আধুনিক ও উন্নত করতে চাই। রেলখাতের উন্নয়নে এরইমধ্যে ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ এশিয়ার অনেক দেশ থেকে বিনিয়োগ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এখন ইউরোপের দেশগুলো থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা নেবো।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৮৮০ এর দশকে বিদ্যুৎ চালিত রেল গাড়ির উদ্ভাবন হয়। যে কারণে দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থার বৈদ্যুতায়ন ঘটে। ১৯৪০ এর দশকের শুরুর দিকে রেলের ইঞ্জিনে বাস্পের বদলে ডিজেলের ব্যবহার শুরু হয়। ষাটের দশকে সর্বপ্রথম জাপানে বিদ্যুতায়িত উচ্চগতির রেলব্যবস্থা চালু হয়। বর্তমানে জাপানের বাইরে চীন, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র এবং স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলোতে উচ্চগতির রেল ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে রেল সেবায় উন্নত দেশগুলোও এখন ইঞ্জিনে ডিজেলের ব্যবহার বাদ দিয়ে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে রূপান্তরের পথে হাঁটছে। কোনো দেশ গ্যাস ব্যবহার শুরু করেছে। বাংলাদেশও পরিবেশবান্ধব এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মোট ৩৩৯ টি যাত্রীবাহী ট্রেন রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল ইন্টারসিটি ৮৬টি, মেইল এক্সপ্রেস ৫২ টি, ডেমো/কমিউটার ৬৪টি, শাটল/লোকাল ১৩৫ টি, আন্তঃদেশীয় ২টি ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া সপ্তাহে তিন দিন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক জোড়া ট্রেন (মৈত্রী এক্সপ্রেস) চলাচল করে। জানা গেছে, এরমধ্যে অধিকাংশ ট্রেনের ইঞ্জিনের মেয়াদ নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এসব পুরনো ইঞ্জিন ধীরে ধীরে বাদ দিয়ে নতুন করে সাজানো হবে রেল খাতকে।

সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ

রেলপথ মন্ত্রী রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর