নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সতর্কতা, দ্রুত ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান
৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:১৩
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী। এর পেছনে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে করোনাভাইরাস সংক্রমন নিয়ে সাবধান ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা এখনো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেননি, তাদের দ্রুত এই ভ্যাকসিন নেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি ও চতুর্থ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে দেওয়ার তার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো এই ভাষণ সম্প্রচার করছে।
চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক এই মহামারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের গত ২০২০ ও ২০২১ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সংকট এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
আরও পড়ুন- ‘দ. এশিয়ায় নেতৃত্বে, পাশে থাকলে ২০৪১ সালে উন্নত হবে বাংলাদেশ’
দ্রুত করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন পূর্ণোদ্যমে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগের কাজ চলছে। চলতি মাস থেকে গণটিকা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিমাসে এক কোটি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৭ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ, আর দুই ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার মানুষ। গত মাস (ডিসেম্বর) থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমাদের হাতে সাড়ে ৯ কোটিরও বেশি ডোজ ভ্যাকসিন মজুত আছে।
করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে এই ক্ষত আরও অনেক দেশের মতোই অতটা গভীর হয়নি বলে ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আপনাদের সহায়তায় আমরা এই ক্ষত অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদারনৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৫৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ এবং প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা করে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ ছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে। দ্য ইকোনমিস্ট ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯ম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
জাতির পিতার শোষণ-বঞ্চনামুক্ত গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল এমন একটি দেশ যেখানে সব ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিপেশার মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। প্রতিটি মানুষ অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার সুযোগ পাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি তাকে সপরিবারে হত্যা করে। তাকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়।
এরপর অনেক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে পরনির্ভরশীল করে রাখা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে তিনি ফের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম শুরু করেন বলেও উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য ছিল— জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আমরা দায়িত্ব নিয়েই বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিই। মাঝখানে ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সে প্রচেষ্টায় ছেদ পড়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে ফের আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নিলে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আর্থসামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নয়ন সাধন করেছে। ২০২১ সাল ছিল আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক অভূতপূর্ব স্বীকৃতির বছর। গত বছর আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে এই অর্জন বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
আওয়ামী লীগ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সরকারের ৩ বছর