বাণিজ্যমেলা ঘিরে গণপরিবহন সংকটে গাজীপুরবাসী
৭ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৫১
গাজীপুর: শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) শুরুর পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনও বটে। আর সে কারণেই গত ছয় দিনে মেলায় ভিড়ভাট্টা তেমন না থাকলেও এদিন ছিল উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সবার অভিযোগই এক— গণপরিবহন সংকটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
গত ১ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এবারের বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের মেলার সবচেয়ে বড় পার্থক্য— এই প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে নির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে শুরু হয়েছে এই মেলা। চলবে জানুয়ারি মাসজুড়ে।
শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ছিল সপ্তম দিন। মেলার হিসেবে প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনও। তাই উৎসুক ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে মেলায় আসা বেশিরভাগ ক্রেতার অভিযোগ— মেলার অবস্থান পূর্বাচলে হওয়ায় গণপরিবহন সংকটে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুর থেকে মেলায় ঘুরতে যাওয়া মানুষের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলে, গাজীপুর থেকে মেলায় ঘুরতে আসা বেশিরভাগ মানুষই পূবাইল থানার মীরেরবাজার এলাকা দিয়ে উলুখোলা বাজার হয়ে মেলায় প্রবেশ করেছেন। মেলায় ঘুরতে আসা সোহাগী নামে একজন সারাবাংলাকে বলেন, বাণিজ্যমেলার সামনে এই অবস্থা থাকবে জানলে আসতাম না। পূবাইলে যাওয়ার মতো কোনো গাড়ি নেই। দুয়েকটি গাড়ি পাওয়া গেলেও এত বেশি ভাড়া যে যাওয়ার মতো উপায় নেই। এত ভোগান্তি হলে মানুষ মেলায় আসবে কীভাবে!
গাজীপুর থেকে আসা অনেকেই জানালেন, মীরেরবাজার থেকে বাণিজ্যমেলা পর্যন্ত দূরত্বে ইজিবাইকে সর্বোচ্চ ভাড়া সাধারণ সময়ে ৬০ টাকা। তবে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেল, সেই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। অন্যদিকে সিএনজি অটোরিকশায় একই দূরত্ব সাধারণ সময়ে ৩০০ টাকা হলেও এখন সেই ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে! বিশেষ করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এই ভাড়া। আর সে কারণেই মেলায় আসা অনেকেই মেলা থেকে ফিরছেন পদব্রজে!
ইজিবাইক ও সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা অবশ্য বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না। তারা বলছেন, সড়কে যানজট থাকার ফলে তাদের ট্রিপ কম হচ্ছে। মীরেরবাজারে থেকে বাণিজ্যমেলার সড়ক ভাঙা থাকায় ঝুঁকির কারণেও তারা ‘একটু বেশি’ ভাড়া নিচ্ছেন। তবে মেলায় আসা দর্শনার্থী এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যমেলার উপচে পড়া ভিড়কেই ‘বাড়তি আয়ের সুযোগ’ হিসেবে নিয়েছেন ইজিবাইক ও সিএনটি অটোরিকশার চালকরা।
ঢাকা থেকে বাণিজ্যমেলায় যাওয়া ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিআরটিসি’র বাস রয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত চলাচল করছে এসব বাস। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ জানালেন, অন্য দিনগুলোর জন্য ঠিক থাকলেও শুক্র-শনিবার বা অন্য ছুটির দিন পড়লে এই বাসের সংখ্যাও বাড়ানো উচিত।
তাদের সঙ্গে সুর মেলালেন গাজীপুর থেকে আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও। তাদের দাবি, কেবল ঢাকা নয়, গাজীপুরবাসীর জন্যও বাণিজ্যমেলায় যাতায়াতে বাস থাকা উচিত। সেক্ষেত্রে বাণিজ্যমেলা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত না হলেও অন্তত টঙ্গী পর্যন্ত বিআরটিসির বাস সার্ভিস মেলায় উপস্থিতি বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাব এবং পূর্বাচলে যাতায়াতে রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় মেলা নিয়ে উদ্যোক্তা, মেলা কর্তৃপক্ষ ও দর্শনার্থীদের শঙ্কা ছিল। ফলে গতবারের চেয়ে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অর্ধেকের চেয়েও কমেছে। এরই মধ্যে ২২৫টি স্টল ও প্যাভিলিয়নের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর