Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেলার ভিড়ে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ জানুয়ারি ২০২২ ০০:১৯

বাণিজ্যমেলা ঘুরে এসে: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা শুরুর পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সে কারণেই প্রথম ছয় দিনের ‍তুলনায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। ঢাকাসহ গাজীপুর-নারায়ণঞ্জ এবং আশপাশের এলাকা থেকেও এসেছেন অনেকেই। তবে স্টল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিড় বাড়লেও বাড়েনি বিক্রি। ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি।

এদিকে, ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে উপেক্ষিত থেকে গেছে স্বাস্থ্যবিধি। ক্রেতা-বিক্রেতা কাউকেই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিয়ে তেমন সচেতন দেখা গেল না।

শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাণিজ্যমেলা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। শুক্রবারে বাড়তি বিক্রির আশা পূরণ না হলেও বিক্রেতারা অবশ্য বলছেন, সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তারা।

উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

মেলা ঘুরে দেখা গেল, বাণিজ্যমেলার প্রধান গেটে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বারবার সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। ফলে গেট দিয়ে ঢোকার সময় তাদের মাস্ক পরতে হচ্ছে। তবে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের পর অনেকেই মাস্ক খুলে ফেলছেন। একই কাজ করছেন বিক্রেতারাও। মেলায় বারবার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি প্রচার করা হলেও দর্শনার্থী বা বিক্রেতারা কেউই ভ্রুক্ষেপ করছেন না।

মেলায় মিরপুর থেকে সপরিবারে গিয়েছেন আল আমিন। মেলা প্রাঙ্গণের ভেতরে কথা হয় তার সঙ্গে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আসলে কেউ তো মাস্ক পরছে না। আর মেলার স্থায়ী কাঠামোর ভেতরে মাস্ক পরে ঘোরাফেরা করা যায় না। মাস্ক পরে থাকতেও বিরক্ত লাগে। তাই মাস্ক খুলে ঘুরছি।

উত্তরা থেকে গিয়েছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহসিন। মুখে মাস্ক না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে জানালেন, করোনার দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। নিজে সচেতন রয়েছেন। স্টলে গেলে মাস্ক পরছেন, কিন্তু বাইরে মাস্ক খুলে ঘুরছেন। তার বক্তব্য, ‘সবসময় তো আর মাস্ক পরে থাকা যায় না। নিজের কাছেও বিরক্ত লাগে। তাই এখন মাস্ক খুলে ঘুরছি।’

এমন হাজারও দর্শনার্থীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে অনীহা দেখা গেছে। কেবল দর্শনার্থী নয়, বিক্রেতাদের অবস্থাও তথৈবচ। আইসক্রিমের একটি স্টলের বিক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা কেউ কথা বলতে চাননি এ বিষয়ে। অন্য বিক্রেতারাও মন্তব্য করতে চাননি।

ছুটির দিনেও জমেনি বিকিকিনি

মেলায় প্রথম ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল প্রচুর। এর বড় একটি অংশই এদিন প্রথম মেলায় গিয়েছেন। তাদের বড় অংশেরই উদ্দেশ্য মেলা ঘুরে দেখা। নতুন প্রাঙ্গণ, নতুন আয়োজন— এসব বিষয়েই আগ্রহ ছিল বেশি। সে তুলনায় কিনতে আসা ক্রেতার সংখ্যাই বরং কম।

গাজী প্যাভিলিয়নের স্টলে গিয়ে দেখা যায় দর্শনার্থীদের ভিড়। গাজী গ্রুপের গ্যাস স্টোভ, প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ব্লেন্ডার, ইলেকট্রিক হিটারসহ হোম অ্যাপ্লায়েন্সের প্রতিটি পণ্যেই রয়েছে ১০ শতাংশ ছাড়। মেলায় আসা ক্ষুদে দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে শিশুদের জন্য গাজী প্যাভিলিয়নে রাখা হয়েছে মিনি পার্কের ব্যবস্থা। সেখানে শিশুরা খেলার সুযোগও পাচ্ছে।

তবে ভিড় থাকলেও খুব একটা বিক্রি নেই গাজীর প্যাভিলিয়নেও। প্যাভিলিয়নে উপস্থিত কয়েকজন দর্শনার্থী অবশ্য জানালেন, তারা এখন দেখতে এলেও পণ্য কিনতে আবার আসবেন। সামনে বিক্রি বাড়বে— এমন আশাবাদ গাজী গ্রুপের কর্মকর্তাদেরও।

গাজী প্যাভিলিয়েনে কথা হয় গাজী গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার (করপোরেট সেলস) এনায়েত উল্লাহ সরকারের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, মেলার প্রথম সপ্তাহ যাচ্ছে। সেই অর্থে কেনাবেচা নেই। দর্শনার্থীরা আসছেন দেখছেন। এমনিতে সব বাণিজ্যমেলাতেই শুরুতে এমন চিত্রই থাকে। মেলা যত গড়ায়, বিক্রিও তত বাড়ে। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি আশানুরূপ হবে বলে আমরা আশাবাদী।

এনায়েত উল্লাহ সরকার জানালেন, গাজীর প্রতিটি পণ্যেই রয়েছে ১০ শতাংশ ছাড়। মেলায় নতুন পণ্য হিসেবে এসেছে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রেশার কুকার। ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় মিলবে গুণগত মানসম্পন্ন এসব প্রেশার কুকার।

মিনিস্টার প্যাভিলিয়নে কথা হয় দায়িত্বরত সেলস অফিসার রাফির সঙ্গে। তিনি জানান, মেলায় অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল বেশি। কিন্তু সেই অর্থে কেনাবেচা সেই। সামনে দিনগুলোতে বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশার কথা জানালেন তিনিও। এই প্যাভিলিয়নেও বিভিন্ন পণ্যে ১০ থেকে ২০ শতাংশ ছাড় চলছে।

যমুনা ইলেকট্রনিক্সের প্যাভিলিয়নে সেলস অফিসার তানিয়া সারাবাংলাকে বলেন, মেলায় আজ প্রথম ছুটির দিন। যে কারণে মানুষের ভিড় ছিল বেশি। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকটি ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে। যে পরিমাণ দর্শনার্থী এসেছে, সে তুলনায় বিক্রি হয়নি।

মেলায় বাহারি ফার্নিচারের পসরা নিয়ে উপস্থিত আখতার ফার্নিচার। কেমন বিক্রি হচ্ছে— জানতে চাইলে সেলস অফিসার হুমায়ুন সারাবাংলাকে বলেন, মেলায় তাদের অনেক নতুন পণ্য এসেছে। ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার ফার্নিচার রয়েছে। ফার্নিচারগুলোতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ও রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিক্রির চিত্র ভালো নয়। সামনের দিনগুলোর আশায় আছি।

আখতার ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নে কথা হয় বাড্ডা থেকে সপরিবারে মেলায় যাওয়া জসিমের সঙ্গে। মেলায় নতুন কী দেখলেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফার্নিচারে বেশকিছু নতুনত্ব রয়েছে। তবে দাম বেশি। আজ মূলত ঘুরতে এসেছি। দেখছি কেমন কী আছে। আবার একদিন আসব। সেদিন কিনব।

যানজটের ভোগান্তি

কুড়িল থেকে বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। কিন্তু মেলা প্রাঙ্গণ থেকে আশপাশের পুরো এলাকাতেই তীব্র যানজট দেখা গেছে শুক্রবার। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও গাড়ির দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ দর্শনার্থীদের।

এদিকে, মেলা ঘিরে সৃষ্ট যানজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়েনি। দর্শনার্থীরা বলছেন, মূলত এ কারণেই মেলায় আসা দর্শনার্থীদের গাড়ি ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গাড়ির চাপে মেলার আশপাশে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

টপ নিউজ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলা বাণিজ্যমেলা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর