পদ্মা ব্যাংকের লোকসানের তথ্য গোপনে সম্মতিতে টিআইবির উদ্বেগ
৮ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৩০
ঢাকা: ক্রম পুঞ্জীভূত মূলধন সংকট সামাল দিতে বিদেশি বিনিয়োগ আনার শর্ত হিসেবে পদ্মা ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী থেকে লোকসানের তথ্য গোপন করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
এমন সুবিধাকে অনৈতিক ও প্রতারণামূলক আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। বলছে, এটি সামনের দিনে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্বাসযোগ্যতার সমস্যাকে প্রকট করবে। পাশাপাশি বিদেশেও বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সুনাম ক্ষুণ্ন করার ঝুঁকি তৈরি করবে।
শনিবার (৮ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এসব কথা বলেছে। টিআইবি‘র নির্বাহী পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মন্জুর-ই-আলম বিজ্ঞপ্তিতে সই করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলছে, সমস্যা কবলিত পদ্মা ব্যাংকের জন্য ৭০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেলমর্গান শর্ত দিয়েছে— ব্যাংকটির আর্থিক লোকসানের তথ্য হিসাব বিবরণী থেকে গোপন রেখে পৃথক হিসাব তৈরির করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্মতি দিয়েছে। গোপন করা সম্পদের তথ্য পরবর্তী ১০ বছরে ব্যাংকটির মুনাফা থেকে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং খাতে এমন অনৈতিক উদ্যোগ নজিরবিহীন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিবচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রতিষ্ঠার কিছু সময়ের মধ্যেই উদ্যোক্তা পরিচালকদের ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতিতে খেলাপি ঋণে ডুবতে থাকা বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক বাঁচাতে নাম পরিবর্তন (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক), সরকারি চার ব্যাংক ও আইসিবির ৭শ কোটি টাকার বেশি মূলধন জোগান, বিধিবদ্ধ জমা বা এসএলআর সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড়সহ বেশকিছু নীতি সহায়তা দিয়ে আসছে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এসব ছাড়েও ব্যাংকটির ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে দিনকে দিন। এমন অবস্থায় লোকসানের তথ্য বাদ দিয়ে ব্যাংকটির আর্থিক বিবরণী পরিষ্কার দেখানোর চেষ্টা হিসাববিজ্ঞানের দিক থেকে শুধু অনৈতিকই নয়, প্রতারণামূলকও বটে। এটি ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের নামে লুণ্ঠনতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতার নামান্তর।
কেলেঙ্কারির দায়ে জর্জরিত ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অবসায়ন না করে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াসকে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। এ প্রসঙ্গের উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক প্রশ্ন রাখেন— এমন একটি ভুল সিদ্ধান্ত কার বা কাদের স্বার্থে বয়ে নিয়ে চলছে সরকার? আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও কেন ব্যাংকটিকে বাঁচানোর নামে নজিরবিহীন সব উদাহরণ তৈরির দায় নিচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন— আর্থিক বিবরণী কৃত্রিমভাবে ভালো দেখালেই প্রতিশ্রুত বিদেশি বিনিয়োগ জোগাড় করা সম্ভব হবে— তার গ্যারান্টি কী?
ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, বেসরকারি খাতে প্রতিষ্ঠিত হলেও ব্যাংকটির ৬০ শতাংশের বেশি মালিকানা বর্তমানে সরকারি চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইসিবির হাতে থাকার কথা। যে বড় আকারে বিনিয়োগ সংগ্রহের কথা বলা হচ্ছে তাতে যদি প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া যায়, যার সম্ভাবনাই প্রকট, তার পরিণাম বিবেচনায় না নিয়ে এমন অনৈতিক ও প্রতারণামূলক পথে হাঁটা অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী। এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত পুর্নমূল্যায়ন করবে এবং বাস্তবতা বিবেচনায় আইন ও নিয়মকানুন মেনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ নীতির বাস্তবায়নে উদাহরণ তৈরি করবে— এমনটিই প্রত্যাশা করছে টিআইবি।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর