Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নদীতে বাঁধ দিয়ে চলে কয়লা-পাথরবোঝাই গাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসী

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:০৫

সুনামগঞ্জ: তাহিরপুরে পাটলাই নদীর মাঝ দিয়ে কয়লা-পাথরবোঝাই গাড়ি চলাচলের জন্য বাঁধেই নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক। প্রতিবছরই নির্দিষ্ট সময়ে বাঁধ দিয়ে গাড়ি চলাচলের ফলে নদীর নাব্য হারিয়ে চর তৈরি হয়েছে। এতে নদীর একপাশে শুস্ক মৌসুমে হয়ে যায় প্রাণহীন মরুভূমি। আর অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাওরপাড়ের মানুষ। তাহিরপুরের পাটলাই নদীতে কৃত্রিমভাবে নদীর বুকে সড়ক করার ফলে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে প্রশাসন বলছে, নদীর মাঝে বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণের বিষয়ে তাদের জানা নেই। সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তাহিরপুরের সীমান্তঘেঁষা নদী পাটলাই। এই নদীকে ঘিরেই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে। দুর্গম এই এলাকার সঙ্গে ভৈরবসহ সারাদেশে নদীপথের সংযোগ তৈরি হয়েছে। এই নদী দিয়েই ব্যবসায়ীরা কয়লা, পাথর দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠান। এছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঢাকা, ভৈরব থেকে মালামাল পরিবহন করে পাটলাই নদী দিয়ে। তবে বছরের পর বছর তাহিরপুরের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ডাম্পের বাজার ও নতুন বাজার অংশে বাঁধ দিয়ে রাস্তা করা হয়। উপজেলার ৩টি শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা কয়লা-পাথর পরিবহনের জন্য এমনটি করা হচ্ছে প্রতিবছর। এতে নদী নাব্য হারিয়ে অনেক জায়গায় চর জেগেছে। ঘটছে অকাল বন্যা ও ফসল হানির মতো ঘটনা।

স্থানীয়রা বলছেন, নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে বাঁধ অপসারণ করে নদী খনন করতে হবে। এতে সারাদেশে বাণিজ্যিক এলাকা তাহিরপুরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তাহিরপুরের পাটলাই নদীতে একটি প্রভাবশালী মহল নদীতে বাঁধ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে। আমরা সচেতন মহল এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। কোনো নদীর যদি স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয় একদিকে চর পড়বে, নদী ভাঙন হবে, গ্রাম বিলীন হবে। আন্তর্জাতিক এবং দেশের আইনে এই কাজ চরম পরিপন্থী। সুনামগঞ্জ একটি কৃষি প্রধান এলাকা। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের ধান উৎপাদনে। যারা এরকম কাজ করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

পাটলাই নদীর পাড়ের গ্রাম দুধেরআউটার বাসিন্দা মো. মমরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার নদীর মাঝে হয়ে গেছে বাঁধ। এর ফলে নদীর দুই পাড়েই চর পড়েছে। সীমান্তের কাছ থেকে নদী খনন করা হলে তাহলে কাজ করতে সুবিধা হবে।’

বিজ্ঞাপন

বালিয়াঘাটের বাসিন্দা মোশাহিদ খাঁন স্বপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নদীতে অবৈধ বাঁধের কারণে নদীর স্বাভাবিক গতি নষ্ট হয়ে গেছে। চর ভেসে গেছে। আমরা দেখেছি নাব্য হারানো অনেক নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অথচ আমাদের পাটলাই নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীকে হত্যা করা হয়েছে।’ এসময় বাঁধ অপসারণ করে নদী খননের দাবি জানান তিনি।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, ‘নদী খননের দাবি আমরা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি। কোনোভাবেই নদীতে বাঁধ দেওয়া যায় না। এই কাজ সম্পূর্ণ পরিবেশবিরোধী। এই অধিকার কারো নেই। নদী খনন করতে হবে। তাই নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে এই বাঁধ যেনো কেটে দেওয়া হয়।’

সুনামগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের (সুপা) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মলয় চক্রবর্ত্তী রাজু বলেন, ‘বাংলাদেশের নদ নদীর সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে নদী একটি জীবন্ত সত্তা। নদীর দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করে কাজ করা আইনবিরোধী। পাটলাই নদীতে বাঁধ দেওয়ায় পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণ হচ্ছে।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘পাটলাই নদীর ড্রাম্পের বাজার এলাকায় নদীর শুকনো অংশে বাঁধের ব্যাপারে জানা ছিলো না। এখন খোঁজ নিয়ে জানলাম এখানে একটি বাঁধ দেওয়া হয়। তবে সেটা সরজমিনে দেখার দরকার আছে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের মতামতের দরকার রয়েছে। আইন অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি আলকাছ উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘আগে নদীতে বাঁধ দেয়া হতো। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আসায় পরে ভেঙে দেয়া হয়। এরপর প্রায় ৬ বছর কয়লা আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিলো। এখন নদীতে পানি নেই, বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় নদীর মাঝ দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা এলসির পাথর ও কয়লা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতে হচ্ছে। এতে এলাকার মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।’

সারাবাংলা/এমও

কয়লা কয়লা-পাথরবোঝাই গাড়ি নদীতে বাঁধ হাওরবাসী

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর