Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা মোকাবিলা প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ জানুয়ারি ২০২২ ১১:০৫

ঢাকা: করোনাভাইরাস মোকাবিলা প্রকল্পে পরামর্শক খাতেই ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রত্যেক পরামর্শকের মাসিক সম্মানি হিসেবে দেওয়া হবে ৩ লাখ টাকা। তবে এ ব্যয় আরও বেশি ধরে প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে তা কমানো হয়। ‘লোকাল গর্ভমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট’ (এলজিসিআরআরপি) শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিলের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরামর্শক খাতে আরও বেশি ব্যয় প্রস্তাব ছিল। কিন্তু আমরা আলোচনার মাধ্যমে কমিয়ে এনেছি। তবে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শকের প্রয়োজন আছে। কেননা স্থানীয় সরকারে ইঞ্জিনিয়ারের অভাব রয়েছে। সেজন্য পরামর্শকের মাধ্যমেই অনেক কাজ করাতে হবে।’

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ২১ জুন অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ২১ জুনের পিইসি সভার সুপারিশে বলা হয়, প্রকল্পে প্রস্তাবিত ব্যক্তি পরামর্শক অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে এবং পরামর্শকদের সর্বোচ্চ মাসিক ৩ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার বিভাগ বলেছে, প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের জন্য ২৬টি পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৮টি বিভাগে রিজিওনাল সাপোর্ট সেন্টারের জন্য ৪৫টি পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশ মেনে প্রধান কার্যালয়ের জন্য ১৭টি এবং ৮টি রিজিওনাল সাপোর্ট সেন্টারের জন্য ২৭টি পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শকদের মাসিক সম্মানি কমানো হয়েছে। তবে পিইসি সভার ৬নং সিদ্ধান্তে ব্যক্তি পরামর্শকের সর্বোচ্চ সম্মানী ৩ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও প্রথম অবস্থায় তা প্রতিপালন করা হয়নি। প্রথমে সম্মানী ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল।

এছাড়া সম্মানীর ভ্যাট বাবদ ইকনোমিক কোড (কোড-৩২৫৭১০১) ৬ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাখা হয়। ব্যক্তি পরামর্শকের সম্মানী থেকে ভ্যাট কর্তন করতে এবং ভ্যাটের কোড বাদ দিতে হবে। পরবর্তীতে সেটি কমিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তাববে মাসিক বেতন ৩ লাখ করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ করা পরামর্শকদের জন্য কোনো প্রকার ভাতা, মোবাইল সেট, কম্পিউটার, লজিস্টিকস ও অফিস সুবিধা দেওয়ার সংস্থান উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) অন্তভুক্ত করা যাবে না। সেটি মেনেই ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় পরামর্শকদের জন্য কোন স্থানীয় ভ্রমণ ব্যয় না রেখে শুধুমাত্র অর্থ বিভাগ নির্ধারিত জনবলের (আউটসোর্সিং ছাড়া) জন্য তা রাখতে হবে। সেইসঙ্গে যুক্তিসঙ্গতভাবে এ খাতে ব্যয় কমাতে হবে। সেটিও করা হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাংলাদেশের নগরাঞ্চল দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমানশীল অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য অংশ নগরাঞ্চলে পরিচালিত হলেও কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাংলাদেশের নগরবাসীর স্বাস্থ্য সমস্যা, বিভিন্ন পরিসেবার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক প্রভাব নিরসনের সরকার মূখ্য ভুমিকা পালন করছে। তবে এই দায়িত্বের একটি বড় অংশ নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউএলজিআই) উপর বর্তায়, যারা মহামারির প্রত্যক্ষ প্রভাব মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ইউএলজিআইগুলো নাগরিক সেবা এবং অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামোগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকলেও তাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং দক্ষতার অভাব রয়েছে।

বর্তমানে নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল টেকনোলজি, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, ড্রেন নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ এবং সড়কবাতি স্থাপনসহ অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে বরাদ্দ পায় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এই খাতগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। এছাড়াও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিবন্ধন, এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন ইত্যাদিতে নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- এক হাজার ৬১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার ৩২৯টি পৌরসভায় কোভিড রেসপন্স গ্রান্ট দেওয়া হবে। এছাড়া ৮২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ১০টি সিটি কর্পোরেশনে কোভিড রেসপন্স গ্রান্ট, ৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার পরামর্শক সেবা, ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, ৩ কোটি টাকার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং ৬ কোটি টাকার অডিট অ্যান্ড রিভিউ।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উত্তরণে নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি ভবিষ্যতে অনুরুপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি জোরদার, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন পরিচালিত বাজার, কবরস্থান, শ্মশান এবং স্কুলে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী সরবরাহ, অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো সুবিধাবলী যেমন, ড্রেন নির্মাণ, পাবলিক পার্ক, সড়ক নির্মাণ এবং সড়কবাতি স্থাপন, নগর প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা এবং তথ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে মোবাইল অ্যাপস, আইটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোর নিজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য আইটিভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।’

এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান পরিকল্পনা কমিশনের এই কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/জেজে/এমও

৫৬ কোটি টাকা করোনা মোকাবিলা প্রকল্প পরামর্শক ব্যয়

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর