ঢাকা: সেবা প্রকাশনীর পাঠকপ্রিয় ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি বই এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমের বলে ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘সার্বিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণপূর্বক দেখা যায় যে, অভিযোগকারী (শেখ আবদুল হাকিম) প্রতিপক্ষের (কাজী আনোয়ার হোসেন) বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ধারা ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।’
‘এ প্রেক্ষাপটে অভিযোগকারীকে প্রথমত: তার (শেখ আবদুল হাকিম) দাবি অনুযায়ী রচিত বইগুলোর কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্যে ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪২ ও ৪৩ নম্বর বইগুলো যেহেতু তার নামে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সনদ ইস্যু হয়েছে সেহেতু উক্ত বইগুলোর রয়্যালটির দাবি ও ক্ষতিপুরণ চেয়ে কপিরাইট বোর্ডে কিংবা দেওয়ানি আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।’
‘দ্বিতীয়ত: তার (শেখ আবদুল হাকিম) নামে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা বই কোনো স্টোর, বাজার গুদামজাত করা থাকলে তা জব্দ করার জন্য স্থানীয় থানা কিংবা কপিরাইট টাস্ক ফোর্সের নিকট আবেদন করতে পারেন। তৃতীয়ত: দায়রা আদালতে কপিরাইট আইনের ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের প্রতিকার চাইতে পারেন অথবা উভয়পক্ষের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু ও সম্মানজনক নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।’
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, ‘সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে কপিরাইট বোর্ড বা বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যন্ত আবেদনকারীর দাবিকৃত ও তালিকাভুক্ত বইগুলোর প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হলো। এ ছাড়া প্রতিপক্ষকে আবেদনকারীর কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনকৃত প্রকাশিত বইগুলোর সংস্করণ ও বিক্রিত কপির সংখ্যা এবং বিক্রয় মূল্যের হিসাব বিবরণী এ আদেশ জারির তারিখের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।’
এর আগে, গত ১৩ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মাসুদ রানা এবং কুয়াশা সিরিজের ৩১০ বইয়ের স্বত্ত্ব আবদুল হাকিমের বলে রায় দেন।
রায়ে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা নিয়ে শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে কপিরাইট অফিসের দেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এর ফলে এই ৩১০টি বইয়ের মালিকানা শেখ আবদুল হাকিমের রয়ে যায়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা এবং এ বি এম হামিদুল মিসবাহ। কপিরাইট অফিসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও ইফতাবুল কামাল অয়ন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আব্দুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করেন শেখ আবদুল হাকিম।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আইনি লড়াই শেষে ২০২০ সালের ১৪ জুন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস শেখ আবদুল হাকিমের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়।
এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্ত এক মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করে। এরপর গত ১৩ ডিসেম্বর সেই রুল খারিজ করে রায় দেন আদালত।