Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ফের সিন্ডিকেট সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:২৪

ফাইল ছবি

ঢাকা: দুর্নীতি আর সিন্ডিকেটের অভিযোগে ২০১৮ সালে বন্ধ হওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দিয়েছে। সমঝোতা স্মারকে সই করার মধ্য দিয়ে খুলে যাওয়া এই শ্রমবাজারে কর্মী পাঠাতে এবার কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না এমন হুঁশিয়ারি রয়েছে সরকারের। কিন্তু প্রক্রিয়া শুরুর আগেই আবারও সিন্ডিকেটের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেট কিংবা স্বল্প সংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠালে বাড়বে অভিবাসন ব্যয়। এদিকে চলতি মাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে গত দশ বছরে মোট ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮১২ জন কর্মী পাঠানো গেছে। এরমধ্যে ২০১২ সালে ৮০৪ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৮৫৩ জন, ২০১৪ সালে গেছেন ৫ হাজার ১৩৪ জন ২০১৫ সালে গেছেন ৩০ হাজার ৪৮৩ জন, ২০১৬ সালে ৪০ হাজার ১২৬ জন, বিগত বছরগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে নানা রকম সিদ্ধান্তহীনতায় আশানুরূপ কর্মী যেতে পারেনি। কিন্তু ২০১৭ সালে গতি বেড়ে যায়, এ বছর ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন পাঠানো গেছে।

২০১৮ সালেও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, এ বছর ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৭ জন কর্মী কাজ নিয়ে যায় মালয়েশিয়ায়। কিন্তু দুর্নীতি আর সিন্ডিকেটে এ বছরই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ দেয় মালয়েশিয়া সরকার। এরপরও নানা উপায়ে ২০১৯ সালে ৫৪৫ জন গেছেন, ২০২০ সালে গেছেন ১২৫ জন এবং বিদায়ী বছর ২০২১ সালে মাত্র ২৮ জন কর্মী যান দেশটিতে। এবার দেশটিতে ব্যাপক আকারে কর্মী পাঠাতে সমঝোতা স্মারকে সই করা হয়। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে এই চুক্তি করে আসেন। অভিবাসন ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরে সব ধরনের সিন্ডিকেট দুর্নীতি বন্ধ করে কর্মী পাঠানোই এবার লক্ষ্য।

নতুন চুক্তি অনুযায়ী— বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সকল ব্যয় বহন করবেন নিয়োগকর্তা। এই খরচে রয়েছে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনা, আবাসন, কাজে যোগদান এবং ওই কর্মীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ।

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইনসিওরেন্স, কোভিড টেস্ট এবং কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচ বহন করার কথা মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তার। কর্মীর বীমা, চিকিৎসার বিষয়টি নিয়োগকর্তা নিশ্চিত করবেন। দুদেশের মধ্যে হওয়া এই চুক্তির মেয়ার পাঁচ বছর। মেয়াদ শেষে দুই পক্ষ চাইলে মেয়াদ বাড়াতে পারবে।

এর বাইরেও চুক্তিতে কর্মীর বেতন উল্লেখ, মেয়াদ কতদিন, মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বেতন পরিশোধ, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। তবে কোনো কর্মী অবৈধ কাজে লিপ্ত হলে নিজ খরচেই দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর বাংলাদেশ অংশের খরচ কর্মীকেই বহন করতে হবে। আর তা নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি।

সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী কর্মী নিয়োগের এই প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মত নয় বলে উল্লেখ করেছেন বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি- বায়রা’র সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে যতবার এমন চুক্তি হয়েছে ততবারই এ বিষয় উল্লেখ ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এরমধ্যে অনেক অদৃশ্য ব্যয় থাকবে যা কেউ বহন করতে চাইবে না। শেষমেশ শ্রমিকদেরই বহন করতে হবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু করা হবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম সারাবাংলাকে জানান, এখনও ওভাবে কাজ শুরু হয়নি। তিনি বলেন, ‘যে কারণে শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়েছিল, সেটা এবার হতে দেওয়া হবে না। মাননীয় মন্ত্রীও বলেছেন, এবার কর্মী পাঠাতে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না, কোনো দুর্নীতি হতে দেওয়া হবে না।’

সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন চলতি মাসেই দেশটিতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেট সক্রিয় হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।

বেসরকারি জনশক্তি রফতানির সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, তারা সকলেই এই বাজারে কর্মী পাঠাতে চান। কারণ স্বল্প সংখ্যক এজেন্সি কর্মী পাঠালে অভিবাসন ব্যয় বাড়তে পারে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি- বায়রা’র সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে যারা সিন্ডিকেট করে কর্মী পাঠাতেন। তাদের কয়েকজন মিলে আবার সিন্ডিকেট তৈরির চেষ্টা করছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। আমরা চাই সকল নিবন্ধিত এজেন্সি শ্রমবাজারে অংশগ্রহন করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছি নানাভাবে। মন্ত্রণালয়েও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ নতুন করে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

প্রবাসী বৈদেশিক কর্মসংস্থান মালয়েশিয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘আমাদের সেনাবাহিনী যেন তৈরি থাকে’
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৯

আগস্টে কমেছে মূল্যস্ফীতি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৭

সম্পর্কিত খবর