আন্দোলনের বছর ২০২২, মাঠ ‘কাঁপাবে’ বিএনপিসহ বাম দল
৯ জানুয়ারি ২০২২ ২২:৩৮
ঢাকা: আসছে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। নতুন কমিশন গঠনপ্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এছাড়া আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষ অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেজন্য নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণয়ন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাদ-নিরপেক্ষ করার দাবিতে ২০২২ সালকে আন্দোলনের বছর হিসেবে বেছে নিয়েছে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। এই বছর তারা রাজনীতির মাঠ কাঁপানোর লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে।
জানা গেছে, রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্যান্য সরকারবিরোধী ছোট ছোট দলের নেতাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তা-ভাবনা করছে। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন। তবে শুরুতেই আন্দোলনেরর কর্মসূচি কী হবে- সেসব বিষয় নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো আলোচনা হয়নি।
সূত্র জানায়, আসন্ন অধিবেশনের শুরুতে রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর নির্বাচন কমিশন আইন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি কী বলেন, সেসব বিষয় পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে তারা। তবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আগামী ১৩ জানুয়ারি বঙ্গভবন অভিমুখে যাত্রা করবে। ওই সময় সিপিবি রাষ্ট্রপতির কাছে একটি খোলা চিঠি দেবে। এছাড়া রাষ্ট্রপতির সংলাপের বিষয় নিয়ে বামগণতান্ত্রিক জোট সোমবার (১০ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে।
এদের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও পৃথকভাবে বঙ্গভবন অভিমুখে যাত্রাসহ রাষ্টপতিকে খোলা চিঠি প্রদান কর্মসূচি পালন করবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। তবে রাজপথে দৃশ্যমান আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করতে বিরোধীদলগুলোর আরও ২/৩ মাস সময় লাগবে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ইতোমধ্যে সারাদেশে দলটির শাখাসহ জেলা, উপজেলা ও থানা কমিটির সম্মেলন প্রায় শেষ করেছে। সেইসঙ্গে তারা সারাদেশে কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুর সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আন্দোলনের বিষয় নিয়ে আলোচনা শেষ করেছে। যুগপৎ আন্দোলন শুরু হলে সিপিবিও সারাদেশে একযোগে কর্মসূচি পালন করবে।
আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাদ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। তাই আমরা অবাদ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য রাজপথে আছি। এসব বিষয় নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করার জন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এই সরকারের হাতে নিরপদ নয়। তাই দেশ ও জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে। আশা করি শিগগিরই রাজপথে সব রাজনৈতিক দলগুলো দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। চলতি বছর হবে আন্দোলনের বছর।’
এসব বিষয় নিয়ে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বামগণতান্ত্রিক জোট ১৩ তারিখ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে খোলা চিঠি পাঠাবে। নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন এবং আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাদ ও নিরপেক্ষভাবে পরিচলানার জন্য তদারকি সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে বামগণতান্ত্রিক জোটের শরিকদলগুলো অনড় রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে গণফোরামের সভাপতি সাবেক এমপি মোস্তফা মহাসিন মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাদ ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার জন্য জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনে গ্রান্ড কনভেনশন হবে। চলতি মাসেই এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে আলোচনা অব্যহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আসছে ১৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। বঙ্গবভন অভিমুখে যাত্রাসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গণফোরামের পক্ষ থেকে খোলা চিঠি বা স্মারকলিপি দেওয়া হতে পারে।’
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী সারাবাংলা বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনের বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিকদলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা শুরু হয়েছে। শিগগিরই আমরা যৌথ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেব। আশা করি দ্রুতই আমরা একটি অবস্থানে পৌঁছে যাব।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আন্দোলনের বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলতি বছর আন্দোলনের বছর। নির্বাচন কমিশন আইন গঠন ও নির্বাচনকালীন তদারকি সরকার গঠনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শিগগিরই শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্দোলনের বিষয় নিয়ে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। শিগগরই আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে একসঙ্গে রাজপথে আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করা হবে। আশা করি ২/৩ মাসের মধ্যে রাজপথে আন্দোলনের ঢেউ শুরু হবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম