শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সার্থকতা পাবে: নানক
১০ জানুয়ারি ২০২২ ১১:৫৩
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, মুজিববিহীন বাংলায় তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইনশাল্লাহ, তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সার্থকতা পাবে।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তার আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাতটার দিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দিপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জি. আব্দুস সবুর, উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার, আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে।
সাংবাদিকদের সামনে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি এই বাংলা মাকে স্বাধীন করেছিল। পাকিস্তানি কারাগারে বঙ্গবন্ধু থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলায় ছিল স্বাধীনতার অপূর্ণতা। সেই ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি তার স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণতা পেয়েছিল। বাঙালি জাতি যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই যুদ্ধবিধস্ত দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল সেই মুহূর্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এক প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, নাসিক নির্বচন একটি উৎসব। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সামনে নিয়ে নৌকা মার্কায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের ভেতরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নিয়ে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বিভক্তি নেই, মানুষ ঐক্যবদ্ধ। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী গত নির্বাচনে ৮৪ হাজার ভোটে জয়লাভ করেছিল। এবার ইনশাল্লাহ লক্ষাধিক ভোটে জয়লাভ করবে।
প্রসঙ্গত, ১০ই জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালি জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসের একটি অনন্য মাইলফলক। এদিন পূর্ণতা পায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ বছর জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে বাঙালি জাতি দখলদার পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। বিশ্ব-মানচিত্রে অভ্যুদ্বয় ঘটে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও স্বাধীনতার নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনও পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। স্বাধীন দেশে ওই সময় আরেকটি সংগ্রাম শুরু হয়, বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু আদৌ বেঁচে আছেন কিনা কিংবা পাকিস্তান সরকার তাকে ফিরিয়ে দেবে কিনা- সেসব নিয়ে চলে নানান জল্পনা-কল্পনা।
স্বাধীনতার ২৩ দিন পর ১৯৭২ সালের এদিন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি বেলা ১টা ৪১ মিনিটে অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বরাবরের মতো এবারও নানা কর্মসূচি আয়োজন করেছে। পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সোমবার সকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে আটটায় ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ১১ টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/এনআর/একেএম