Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৫৯

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, আমাদের লক্ষ্য সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা।

সোমবার (১০ জানুযারি) বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ প্রতিপাদ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রামপুরা বিটিভির শহিদ মনিরুল আলম মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন তিনি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে এটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, এরপর ‘তুমি বাংলার ধ্রুবতারা’ দেশাত্ববোধক গানটি পরিবেশন করা হয়। পরে পবিত্র ধর্মগ্রস্থ পাঠের পর আলোচনা সভা শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বাবা ও মাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সম্বন্ধে আলোচনা করেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ‘দীর্ঘ নয় মাস আমরা জানতাম না আমার বাবা কোথায় আছেন, কেমন আছেন। কিংবা বেঁচে আছেন কি না- সেটাও জানতাম না। জানার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ বন্দিখানার কোনো খবর পাওয়া যেত না।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এরপর ৮ তারিখে (জানুয়ারি) প্রথম যখন টেলিফোনটা পেলাম আমার মা কথা বলতে পারছিলেন না। শুধু কেমন আছো, কবে আসবে এইটুকুই বলতে পেরেছেন। পরে আমরা সবাই একে একে কথা বলি। সেইদিনটি যে আমাদের জন্য কী রকম ছিল সেটা আপনাদের ভাষায় বোঝাতে পারব না। এরপর ১০তারিখ তিনি যখন ফিরে এলেন তিনি কিন্তু এসে তার প্রিয় জনতার কাছেই গেলেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা বা আমার মা’র কথা চিন্তা করেননি। আমাদের কাছে আসেননি। আমার দাদা-দাদীও তখন এখানে। আমাদের টুঙ্গিপাড়ায় ঘর পুড়িযে দেওয়া হয়, বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আমার দাদা-দাদী কোনো মতে ঢাকায় এসে আমার ফুফাত বোনের বাসায় আশ্রয় নেন। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে থাকতে হয়। কিন্তু কারও কথা না ভেবে তিনি চলে গেলেন তার প্রিয় জনতার কাছে। যে জনগণের জন্য তিনি তার জীবনটা উৎসর্গ করেছেন।’

‘সেই ১০ জানুয়ারির যে ভাষণ, এই ভাষণটা ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা। এই ভাষণটি ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র কাঠামো কীভাবে হবে, স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে চলবে, স্বাধীন রাষ্ট্র কীভাবে-কোন আদর্শে চলবে, সেই আদর্শই তিনি এই ভাষণে দিয়েছিলেন’- বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তার এই ভাষণে আমরা পেয়েছি। স্বাধীন বাংলাদেশ কী আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি তার ভাষণে এটাও বলেছিলেন যখন তাকে ফাঁসি দেওয়ার নির্দেশ হয়, তখন তিনি একটি দাবিই শুধু করেছিলেন- আমাকে তোমরা মেরে ফেলতে পার; কিন্তু আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পৌঁছে দিও। আমার বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘মৃত্যুকে তিনি কখনো ভয় করেননি, জয় করেছিলেন। পাকিস্তানি কারাগারে কী অত্যাচার নির‌্যাতন তার উপর হয়েছে, আমরা কিন্তু জানতে পারিনি। জিজ্ঞাসা করেও জানতে পারিনি। হয়তো আমাদের কাছে বলবে না। রেহানা সবার ছোট ছিল বলে বার বার জিজ্ঞাসা করেছে। উত্তরে শুধু একটা কথাই বলেছেন, ওটা আমি বলতে চাই না। তোরা সহ্য করতে পারবি না।’

‘এই একটি কথা থেকে আমরা বুঝতে পারি, পাকিস্তানি কারাগারে কী দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে থাকে থাকতে হয়েছিল। তিনি সেই স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন। ফিরে আসাটা আমাদের জন্য যে প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ এই বাংলাদেশ তিনি স্বাধীন করেছিলেন’- বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। তারপরও বাংলাদেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। এবং ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে তৃণমূলের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তাদের ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যখনই তিনি তৃণমূলের মানুষদের ক্ষমতায়নের জন্য পদক্ষেপ নিলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিলেন, তখনই কিন্তু তাকে হত্যা করা হলো।’

তিনি বলেন, ‘এই আঘাতটা শুধু একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা না, এই আঘাতটা ছিল একটা স্বাধীন দেশের আদর্শকে হত্যা করা, চেতনাকে হত্যা করা। ১৫ আগস্টের পর খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরাই ক্ষমতায় বসেছিল। তারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কোনো চেষ্টা করেনি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য একটাই- যে আদর্শের জন্য তিনি দেশ স্বাধীন করেছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেছেন, নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করা।’

তিনি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘তারা আমার উপর আস্থা রেখেছে। বার বার আমি ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা হল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পালন করতে পারছি।’

শেখ হাসিনা বলেন ‘আজকে আমাদের এটাই লক্ষ্য, যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা। আজকের দিনে সেই প্রত্যয়ই ব্যক্ত করছি।’

দ্বিতীয় পর্বে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার ও সংগীতশিল্পী এ আর রহমানের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলা গান পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিশেষ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে পরিবর্তিত কোভিড পরিস্থিতির কারণে জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সর্বোচ্চ বিবেচনায় এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেন ও জনসমাগম এড়িয়ে অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘মুক্ত স্বদেশে জাতির পিতা’ প্রতিপাদ্যে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

সাকিবদের টি-১০ লিগে হচ্ছেটা কী!
২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৫

আরো

সম্পর্কিত খবর