Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক: বিএনপি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ জানুয়ারি ২০২২ ২১:২১

ফাইল ছবি

ঢাকা: কোভিড-১৯ এবং ওমিক্রনের সংক্রমণ বিস্তার রোধে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির জনসমাবেশে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার কোভিড-১৯ এবং ওমিক্রনকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে বলেও মনে করছে দলটি।

সোমবার (১০ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ মত দেন দলটির শীর্ষ নেতারা। মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির সাপ্তাহিক সভার প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তগুলো জানান।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এবং ওমিক্রনের বিস্তার রোধে সরকার যে নির্দেশাবলি জারি করেছে তাতে ঘরোয়া পরিবেশে সভা-সমাবেশের সুবিধা বহাল রেখে উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে বিএনপি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের অপপ্রয়াস বলে মনে করে।

এর কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় তুলে ধরেছে বিএনপি। প্রথমত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে বদ্ধ স্থানের চেয়ে উন্মুক্ত স্থানে ওমিক্রন ও কোভিড-১৯-এর বিস্তারের সম্ভাবনা কম বলেছে, সেখানে হাট-বাজার, শপিং মল, স্কুল-কলেজ খোলা রেখে উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। দ্বিতীয়ত, চলমান নির্বাচনি প্রক্রিয়া অব্যহত রেখে রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ রাখা অগ্রহণযোগ্য। তৃতীয়ত, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির জনসমাবেশে বাধা দেওয়ার পরও সফলভাবে সমাবেশ করায় সরকার জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে কোভিড-১৯ ও ওমিক্রনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।

বিজ্ঞাপন

সভায় সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া সরকারপ্রধানের ভাষণে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার দাবি হাস্যকর ও নিম্ন মানের রসিকতা হিসেবে উল্লেখ করা হয় বিএনপির বিবৃতিতে। বলা হয়— ২০১৪ ও ২০১৮ সালের তথাকথিত নির্বাচনি প্রহসনের বিষয়টি দেশে-বিদেশে বহুলভাবে সমালোচিত এবং সমানভাবে প্রত্যাখ্যাত। এসব নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য দলগুলো অংশ নেয়নি। নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। এসব অপকর্ম গোপন রাখার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আসতে না দিয়ে ভুয়া পর্যাবেক্ষক আনার অপচেষ্টা চালিয়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়েছে। এরপরও যখন সরকারপ্রধান দাবি করেন তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত, তখন এটি স্পষ্টই বোঝা যায়— এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে আগামী নির্বাচন এমনই হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অবৈধ সরকারের প্রধান তার বক্তৃতায় তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করলেও সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু এ জন্যই বলেননি যে তাহলে জনগণ প্রকৃত তথ্য জেনে যাবে। বাস্তবতা তো এই— বছরের পর বছর ধরে এই সরকার প্রকাশ্যে অবিরাম জনগণের মৌলিক মানবাধিকার হরণ করে চলেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় দমনের জন্য গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নিপীড়ন, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি এবং নির্যাতন চালিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন আমাদের মাতৃভূমিকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে। সারাবিশ্বে সরকারের এই অব্যাহত নির্মম ও অগণতান্ত্রিক আচরণ প্রত্যক্ষ করেছে এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমের একাংশ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো সরকারের অগণতান্ত্রিক, অমানবিক ও দমনমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি ক্রমাগত এসবের প্রতিবাদ জানিয়েছে, প্রতিকার চেয়েছে। এমনকি জাতিসংঘের কমিটি ফর এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়রেন্স বার বার এ ব্যাপারে রিপোর্ট পেশ করে তা বন্ধ করার আহ্বানে ব্যর্থ হয়ে তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশে আসতে চাইলে তাদের আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও কংগ্রেসের দ্বি-দলীয় যৌথ গ্রুপ, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটি, টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশন, ব্রিটিশ ও অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের বহু দেশের সংসদে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি, বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের দমনে অমানবিক কঠোরতা, গুম, খুন এবং নির্বাচনি প্রহসনের বিষয়ে আলোচনা ও সুপারিশ করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অসংখ্য জরিপ রিপোর্ট ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু সরকারের আচরণে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। বরং স্বৈরাচারী সরকার ক্রমান্বয়ে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠেছে— বলা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যে নাগরিকদের গুম, খুন, নির্যাতন করা হচ্ছে সেই নাগরিকদের অর্থ দিয়েই এই সরকার একাধিক লবিষ্ট নিয়োগ করে ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতার ক্ষোভ থেকেই সরকারপ্রধান জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। বিএনপি মনে করে, ক্ষমতার মোহে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারই ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনি ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। দুর্নীতি, অর্থপাচার ও অপশাসনের দ্বারা জনগণকে ক্রমবর্ধমান ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ করেছে এবং ক্রমাগত জনগণের মৌলিক মানবাধিকার হরণ করে বিশ্ব দরবারে দেশের মর্যাদা ধ্বংস করে দিয়েছে।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

টপ নিউজ বিএনপি বিধিনিষেধ সভা-সমাবেশ বন্ধ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর